• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৭ মার্চ, ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩০, ৫ রমজান ১৪৪৫

মুড়ি ভর্তায় জিলাপি মাখানো নিয়ে যত বিতর্ক!


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ১২:০৪ পিএম
মুড়ি ভর্তায় জিলাপি মাখানো নিয়ে যত বিতর্ক!
সূত্র: সংগৃহীত

চলছে রমজান মাস। মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত বরকতময় মাস এটি। এই মাসজুড়ে রোজা রাখা হবে। আর পেট ভরে ইফতার খাওয়া হয়। পুরো মাসজুড়ে ইফতার আয়োজনে কতই না বৈচিত্র্য থাকে। হরেক রকমের খাবারের স্বাদেও থাকে বৈচিত্র্য। আবার পুরোনো খাবারের সঙ্গে নতুন কিছু যোগ করেও স্বাদ বদলে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ঝাল-মিষ্টির স্বাদের সংমিশ্রণে ভিন্নতাও থাকে। যেমনটা রয়েছে মুড়ি ভর্তার সঙ্গে জিলাপির সংমিশ্রণ। এই খাবার অনেকের কাছেই ভীষণ প্রিয়। আবার অনেকের কাছে এটি স্বাদের ভেজাল ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন অনেক কথায় বিতর্ক রয়েছে প্রিয় এই খাবারটি নিয়ে।   

মুড়ি মাখানোতে জিলাপি যোগ করার পর ঝাল-মিষ্টির যে স্বাদ পাওয়া যায় তা অনেকেরই কাছেই প্রিয়। আবার অনেকের ধারণা, এটি মুড়ি মাখানোর পুরোনো ঐতিহ্যকে নষ্ট করে।

রমজান একটি সংবেদনশীল মাস। আযানের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা হয়। বাড়িতে, দোকানে থাকে নানা রকমের ইফতার আয়োজন। দোকানীরা বিশেষভাবে তৈরি করে গরম জিলাপি। সেই সঙ্গে ভাজাভুজি খাবার তো থাকেই। এই ভাজাভুজি খাবার যোগ করেই ইফতার আয়োজনে মাখানো হয় মুড়ি ভর্তা। সেই সঙ্গে স্বাদ বাড়াতে কেউ কেউ মুড়ি ভর্তায় যোগ করেন মিষ্টি জিলাপি। ব্যস, স্বাদের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

তবে এই স্বাদ আবার অনেকের কাছেই অপ্রিয়। যা নিয়েই চলতে থাকে বিতর্ক। খাবার টেবিল হোক, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খাবারের পক্ষে-বিপক্ষে মত নিয়ে ঝড় বইতেই থাকে। বলা যায়, বেশ পুরোনো বিতর্কের বিষয়, জিলাপি কি মুড়ি মাখানোর স্বাদ সত্যিই বাড়ায়!

শতাব্দী পুরোনো মুড়ি বেশ হালকা খাবার। যা সহজে হজমযোগ্য। ইফতারে সরিষার তেল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সামান্য লবণ এবং কিছু ছোলার সঙ্গে মিশিয়ে মুড়ি মাখানো হয়। শুধু রোজায় নয়, এই খাবার সারাবছরই অনেকের কাছে প্রিয়।

জিলাপি মুঘল যুগের একটি খাবার। পারস্য ব্যবসায়ীরা এই খাবার বেশ পছন্দ করতেন। কড়া ভাজা মিষ্টি বলতেই জিলাপির জনপ্রিয়তা ছিল। আর পিয়াজু আর বেগুনী বাঙালির খাবার হিসেবেই বেশি পরিচিত। আলুর চপ আবার পর্তুগিজদের থেকে এসেছে। সব খাবারের স্বাদই ভিন্ন। কিন্তু মুড়ি ভর্তায় যখন সব মিশে যায় তখনই স্বাদে বৈচিত্র্য আসে।

ভোজনরসিকদের অনেকেরই মতে, মুড়ি মাখানোতে জিলাপির মিশ্রণ ঝাল-মিষ্টির সেরা কম্বো! অন্যদিকে এই স্বাদের বিরোধিতা করা ভোজনরসিকরা মনে করেন, মুড়ি মাখানোর সঙ্গে জিলাপির মিশ্রণ ক্লাসিক খাবারের স্বাদকে নষ্ট করে।

এক পরিবারে ইফতার টেবিলে বসা সদস্যরা এই বিষয়ে কঠোর যুক্তি ঠেলে দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহিন জিলাপির প্রতি আসক্ত। তার মতে, আইসক্রিমে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ডুবিয়ে দিয়ে খেতে পারলে, মুড়িতে জিলাপি কেন দেওয়া যাবে না। এটাই তো খাবারের নতুনত্ব। কারণ কন্ট্রাস্ট সবকিছুর স্বাদ ভালো করে তোলে। খসখসে মুড়ি, সরিষার তেলের তীক্ষ্ণতা, মরিচের ঝালের সঙ্গে আঠালো, চিনিযুক্ত জিলাপির মিশ্রণের চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে।“

অন্যদিকে শাহিনের বোন বেসরকারি চাকরিজীবী শেফালির মতে, "মুড়ি মাখানো হালকা খাবার। এর স্বাদ যত হালকা হবে ততই ভালো। জিলাপি হলো মিষ্টির রাজা। মুড়ি মাখানোর সঙ্গে এই মিষ্টি যুক্ত হলে স্বাদে বিশৃঙ্খলা ঘটে। কারণ মুড়ি মচমচে খাবার। যার মধ্যে আঠালো কিছু যুক্ত হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই মচমচে স্বাদটা নষ্ট হয়ে নরম হয়ে যায়। যা জগাখিচুড়িতে পরিণত হয়।“

এদিকে শেফালি আর শাহিনের দাদু কাশেম একজন কঠোর ঐতিহ্যবাদী। তার মন্তব্য, "আগের দিনে মুড়ি মাখানোতে মুড়ি, লবণ, পেঁয়াজ, সরিষার তেল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এই নতুন প্রজন্ম পথ হারিয়ে ফেলেছে। এরপর কী হবে? মুড়িতে চকলেট সিরাপ যোগ করা হবে? ঝালমুড়িকে ‍‍`ডিকনস্ট্রাক্টেড পাফড রাইস‍‍` নামে ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হবে!"

দাদু কাশেমের মতে, মুড়ি মাখানো জিলাপি ছাড়াই টিকে আছে যুগ যুগ ধরে। এখন কেন নতুনত্ব শুরু করতে হবে। এটা অনেকটা বিরিয়ানির ওপর শরবত ঢালার মতোই অযৌক্তিক।

তাহলে জিলাপি কী মুড়ি মাখানোর সঙ্গে দেওয়া যাবে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তর কী হতে পারে। এর উত্তর হতে পারে, হ্যাঁ বা না। অর্থাত্ পুরোপুরি ব্যক্তিগত পছন্দের উপরই বিষয়টি ছেড়ে দিতে হবে। অর্থাত্ যে ঝাল মিষ্টির কম্বোকে পছন্দ করবে তার জন্য এটি সেরা খাবার হতে পারে। আবার যার কাছে মুড়ি মাখানোর ঐতিয্যকে নষ্ট করা যাবে না এবং ঝাঁঝালো মুড়ি মাখানোতেই তৃপ্তি মিলবে, তিনি অবশ্যই সাধারণ মুড়ি মাখানোতেই আনন্দিত হবেন। তাই ইফতার আয়োজনে মুড়ি আর জিলাপির কম্বো হোক শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পছন্দের অংশ।

Link copied!