• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাটারিচালিত রিকশায় কি সুবিধা বেশি, না অসুবিধা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম
ব্যাটারিচালিত রিকশায় কি সুবিধা বেশি, না অসুবিধা
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি সময়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা একটি জনপ্রিয় যানবাহন। ছোট দূরত্বে যাত্রী পরিবহনের জন্য এটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রিক ব্যাটারির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় এটি প্রচলিত প্যাডেলচালিত রিকশার তুলনায় আরামদায়ক। এটি শহরাঞ্চলে বিশেষত বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি প্রশংসিত হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি বিতর্কিত।

ব্যাটারিচালিত রিকশার সুবিধা পরিবেশবান্ধব। যা জ্বালানিসাশ্রয়ী এবং ধোঁয়া বা কার্বন নিঃসরণ করে না। এটি পরিবেশদূষণ রোধে সহায়ক। এই যানবাহনে কোনো জ্বালানি (পেট্রোল বা ডিজেল) ব্যবহৃত হয় না, ফলে বায়ুদূষণ হ্রাস পায়। এটি একটি টেকসই পরিবহন পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। কারণ এটি  নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জ করা যায়।

ব্যাটারিচালিত রিকশা অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয়ী। জ্বালানি-চালিত যানবাহনের তুলনায় ব্যাটারিচালিত রিকশার পরিচালনা ব্যয় কম। তাই রিকশাচালকের জন্য এটি লাভজনক যানবাহন। এতে জ্বালানি খরচের পরিবর্তে চার্জের খরচ অনেক কম হয়। তাই কম খরচে সহজে যাত্রী পরিবহন করা যায়।

ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রচলিত রিকশার তুলনায় চালানো সহজ। রিকশাচালকদের প্যাডেল চালানোর কষ্ট করতে হয় না। ইলেকট্রিক মোটর ব্যবহারের কারণে এটি শারীরিক পরিশ্রম কম হয়। চালক বয়স্ক বা শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও সহজে চালাতে পারেন।

এছাড়াও ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রচলিত রিকশার তুলনায় দ্রুতগতি সম্পন্ন। এটি যাত্রীদের জন্য সময় সাশ্রয় করে। যাত্রীরা আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করতে পারে, কারণ এটি কম্পনহীন এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়।

সম্প্রতি গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় অঞ্চলে ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। রিকশাচালকদের জন্য একটি আধুনিক এবং সহজ পেশার সুযোগ করেছে। স্বল্প দূরত্বে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনের জন্য এটি একটি আদর্শ যান। তিন থেকে চারজন যাত্রী সহজেই বহন করা যায়। এটি  রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম।

সুবিধা থাকার পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশায় অসুবিধাও রয়েছে। এই রিকশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায়  শহরাঞ্চলে যানজটের সমস্যা বেড়ে যায়। কারণ ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো ধীরগতির যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে। রাস্তায় অপরিকল্পিতভাবে চলাচলের কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক ব্যাটারিচালিত রিকশা ট্রাফিক নিয়ম না মেনে চালানো হয়, যা সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।

ব্যাটারিচালিত রিকশার অন্যতম বড় সমস্যা হলো চার্জিং স্টেশনের সীমিত সংখ্যা। রিকশা চার্জ করতে দীর্ঘ সময় লাগে এবং পর্যাপ্ত চার্জিং পয়েন্ট না থাকলে সমস্যায় পড়তে হয়। গ্রামীণ এলাকায় চার্জিং স্টেশন খুবই কম, যা ব্যাটারি ব্যবহারে সমস্যা তৈরি করে।

ব্যাটারি একবার পূর্ণ চার্জ করলে নির্দিষ্ট দূরত্বের বেশি চলতে পারে না। তাই দীর্ঘ সময় ভ্রমণের জন্য এটি অনুপযুক্ত। ব্যাটারির কার্যক্ষমতা কমে গেলে নতুন ব্যাটারি কিনতে হয়। যার খরচ অনেক বেশি। এছাড়াও ব্যাটারিতে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার হলে বিস্ফোরণ বা দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত চার্জিং বা ব্যাটারির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হলে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারির আয়ুষ্কাল তুলনামূলকভাবে কম।ব্যাটারি নিষ্পত্তি করা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা ট্রাফিক নিয়ম বুঝতে বা মানতে পারে না। লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বাড়ছে। যা সড়ক ব্যবস্থাপনায় সমস্যা করে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জ করতে প্রচুর বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে জাতীয় গ্রিডে  অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

ব্যাটারিচালিত রিকশার সুবিধাগুলো টিকিয়ে রাখতে এবং অসুবিধাগুলো দূর করতে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। শহর ও গ্রামে পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন স্থাপন করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি ও নিরাপদ ব্যাটারি ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ট্রাফিক আইন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণ করে যানজট হ্রাস করা যেতে পারে। এছাড়াও ব্যবহৃত ব্যাটারি পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশদূষণ কমানো সম্ভব।

Link copied!