দেবীর পূজায় যেসব অনুষঙ্গ লাগবে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৪, ০৮:৫০ পিএম
দেবীর পূজায় যেসব অনুষঙ্গ লাগবে
সূত্র: সংগৃহীত

দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই পূজার মাধ্যমে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। যিনি শিবের স্ত্রী ও শক্তির প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। দুর্গাপূজা ঘিরে বেশ কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যার প্রতিটিতে নির্দিষ্ট অনুষঙ্গের প্রয়োজন হয়। পূজার প্রতিটি ধাপেই বিভিন্ন সামগ্রীর প্রয়োজন পড়ে। দুর্গাপূজার প্রতিটি আচার এবং অনুষঙ্গের মধ্যে নিহিত রয়েছে গভীর ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য। প্রতিটি উপকরণ এবং পূজার ধাপ দেবীর প্রতি ভক্তির প্রকাশ এবং তার আশীর্বাদ লাভের জন্য নিবেদিত। দুর্গাপূজার জন্য যেসব অনুষঙ্গ বা সামগ্রী লাগে চলুন জেনে নেই এই আয়োজনে।

মাটি এবং ঘট

দুর্গাপূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো দেবীর মূর্তি। এই মূর্তি তৈরি করতে সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে মাটি সংগ্রহ করা হয়। মাটির উৎস হিসেবে সাধারণত গঙ্গার তীর বা পবিত্র কোনো স্থান বেছে নেওয়া হয়। মাটির পাশাপাশি পূজায় ঘট স্থাপন করা হয়। যা দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে পূজার মণ্ডপে স্থাপিত হয়। ঘটের উপর নারকেল রেখে পূজার সূচনা করা হয়।

দেবী দুর্গার মূর্তি

দুর্গাপূজার কেন্দ্রবিন্দু হলো দেবী দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তিতে দেবী দুর্গাকে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে অঙ্কিত করা হয়। মূর্তিতে দেবীর দশ হাতে বিভিন্ন অস্ত্র থাকে, যা দেবীর শক্তি এবং সাহসের প্রতীক। এই মূর্তির পাশে গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মূর্তি থাকে। যা পরিবারের ঐক্য ও সৌভাগ্যের প্রতীক।

পুষ্প

পূজার জন্য নানা ধরনের ফুলের প্রয়োজন হয়। দেবী দুর্গার জবা ফুল খুব প্রিয়। তাই পূজায় লাল জবা ফুল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বেলিফুল, অপরাজিতা, গাঁদা ইত্যাদি ফুলও পূজায় ব্যবহার করা হয়। ফুলের মাধ্যমে দেবীকে স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতা অর্পণ করা হয়। ফুল দিয়ে দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। যা পূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

বেলপাতা

দেবী দুর্গাকে বেলপাতা অর্পণ করা অত্যন্ত শুভ ও পবিত্র বলে মনে করা হয়। বেলপাতা দেবী শিবের স্ত্রী হিসেবে দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তিনটি পাতা বিশিষ্ট বেলপাতা দেবীর ত্রিনেত্রের প্রতীক হিসেবে পূজায় ব্যবহার করা হয়।

ধূপ ও প্রদীপ

পূজার সময় ধূপ এবং প্রদীপ জ্বালানো আবশ্যক। ধূপকাঠি বা ধুনো জ্বালিয়ে ধূপের সুগন্ধ ছড়িয়ে দেবীকে আহ্বান করা হয়। এটি পূজার পরিবেশকে পবিত্র করে তোলে। প্রদীপ বা দীপ জ্বালিয়ে দেবীর সামনে আলোকিত করা হয়, যা দেবী দুর্গার শক্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

চন্দন এবং সিঁদূর

দুর্গাপূজায় চন্দন এবং সিঁদূর দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। চন্দন দেবীর গায়ে মাখানো হয়, যা তার সৌন্দর্য এবং মঙ্গল কামনা করে। এছাড়া, সিঁদূর দেবীর সিঁথিতে পরানো হয়, যা বিবাহিত নারীদের প্রতীক এবং শুভ লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ।

নবপত্রিকা

দুর্গাপূজায় নবপত্রিকার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটি আসলে নয়টি পবিত্র গাছের সমষ্টি, যা দেবীর শক্তির প্রতীক। নবপত্রিকাকে দেবীর রূপ হিসেবে স্নান করিয়ে পূজায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই নবপত্রিকায় কলাগাছ, কচু, চালকুমড়া, বেল, দাড়িম্ব, হরিদ্রা, ধান, মাঞ্জিষ্ঠা এবং অশোক গাছের পাতা থাকে। এটি পূজার অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

হাতে তৈরি প্রসাদ

দুর্গাপূজার সময় দেবীকে নৈবেদ্য বা প্রসাদ নিবেদন করা হয়। এই প্রসাদ সাধারণত বাড়িতে তৈরি হয়। প্রসাদের মধ্যে থাকে ফল, মিষ্টি, নরম রুটি বা অন্যান্য খাদ্য। দেবীকে উৎসর্গ করার পর এই প্রসাদ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

ঢাক, কাঁসা এবং শঙ্খ

দুর্গাপূজার সময় ঢাক, কাঁসা এবং শঙ্খ বাজানোর ধারা রয়েছে। ঢাকের শব্দ পূজার পরিবেশকে আরও উত্সবমুখর করে তোলে এবং ভক্তদের মনকে পূজায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। শঙ্খধ্বনি পূজার শুভ সূচনার প্রতীক। এছাড়া কাঁসার শব্দ পূজার সময়কার অন্যতম পবিত্রতা এবং ভক্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মন্ত্র এবং পবিত্র গ্রন্থ

দুর্গাপূজার সময় পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণ করে পূজার প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করেন। দেবী মহাত্ম্য বা চণ্ডী পাঠ করা হয়, যা দুর্গাপূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পাঠের মাধ্যমে দেবীর গুণকীর্তন এবং তার কাছে ভক্তদের মঙ্গলকামনা করা হয়।

Link copied!