চৈত্র মাসের শুরুতেই একটি পাখি এসে বিজু বলে ডাক দিয়ে যায়। চাকমা সম্প্রদায় এ পাখিকে বিজু পেইক (বিজু পাখি) বলে। এই পাখির সুমধুর কলতানে বিজু বা চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে।
নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে আদিবাসীরা তিন দিনব্যাপী এ বর্ষবরণ উৎসব পালন করে থাকে মহা-ধুমধামের সঙ্গে। বছরের প্রথম দিনকে ত্রিপুরা সম্প্রদায় ‘বৈজু’, মারমা সম্প্রদায় ‘সাংগ্রাই’ এবং চাকমা সম্প্রদায় ‘বিজু’ নামে অভিহিত করে থাকে। এই তিন সম্প্রদায়ের উৎসবের আদ্য অক্ষর দিয়ে গঠিত হয়েছে ‘বৈসাবি’। বৈসাবি উৎসব পালনের নিয়মকানুনগুলো হলো—
ফুল বিজু
ফুল বিজুর দিন ভোররাতে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নানা রকমের ফুলের সন্ধানে শিশু-কিশোরের দল সবুজ পাহাড় থেকে পাহড়ি ফুল সংগ্রহ শেষে বাড়িতে ফিরে ফুলগুলোকে চার ভাগে ভাগ করে এক ভাগ দিয়ে নিজের মনের মতো করে ঘরবাড়ি সাজায়। দ্বিতীয় ভাগে ফুল নিয়ে যায় বৌদ্ধ বিহারে। বুদ্ধের উদ্দেশে ফুল উৎসর্গ করে সমবেত প্রার্থনায় রত হয়।
মূল বিজু
মূল বিজু হচ্ছে বিজুর প্রথম দিন। ফুল বিজুর দিনে মূল বিজুর প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এদিনে ঘরের মহিলারা খুবই ব্যস্ত থাকে। ত্রিশ-চল্লিশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও অধিক কাঁচা তরকারির সংমিশ্রণে পাচন বা ঘণ্ড তৈরি করা হয়। পাচন ছাড়াও নানা ধরনের পিঠা, পায়েস, মাছ-মাংসের আয়োজনও থাকে।
গজ্যাপজ্যা বিজু
নববর্ষের প্রথম দিনকে চাকমারা গজ্যাপজ্যা বিজু হিসেবে উদযাপন করে। এদিন বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে চাকমারা বিশ্রাম করে দিন অতিবাহিত করে। সন্ধ্যায় সবাই স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে ধর্ম অনুশীলনে মশগুল থাকে। ভিক্ষু সংঘ কর্তৃক ধর্ম দেশনা শুনে অনাগত দিন সুখেশান্তিতে কাটানোর জন্য বিশেষ প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করে। এভাবে গজ্যাপজ্যা দিনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
সাংগ্রাই
সাংগ্রাই, এটি মারমা ভাষা। মারমা সম্প্রদায় বছরের শেষ দিনে নানা অনুষ্ঠান পালন করে। যার কারণে এ দিনটিকে সাংগ্রাই নামে অভিহিত করা হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে সাংগ্রাই পালন করে থাকে মারমা সম্প্রদায়। সেমাই, পাচন, পিঠা এবং নানা মুখরোচক খাবারের আয়োজন করে মারমা সম্প্রদায়। একে অপরের বাড়িতে যায়, কুশলবিনিময় করে এবং আনন্দ-উৎসবে মেতে থাকে।
কিছু কিছু চাকমা গ্রামে চারণকবিদের (গেঙ্গুলিদের) দিয়ে পালা গানের আয়োজন করে থাকে। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ও তাদের গ্রামে আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী গড়াইয়া নৃত্যের। পরিশেষে তারা দেশের জনগণের সুখশান্তি এবং দেশ সমৃদ্ধি লাভ জন্য এ বিশেষ প্রার্থনায় দিনের কার্যাদির পরিসমাপ্তি ঘটায়।