সন্তানের সঙ্গে মায়ের আর মায়ের সঙ্গে সন্তানের যে গভীর সম্পর্ক তা আর বিরল। পৃথিবীতে আর কোনো সম্পর্কের মধ্যে তীব্র অনুভূতি আর নেই। প্রাণিকুলে মা আর সন্তানের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে কম গবেষণা হয়নি। জিনগত, বায়োলজিক্যাল, সামাজিক, মানসিক বা সাইকোলজিক্যাল কত ব্যাখ্যা দিয়ে যে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে তা শেষ নেই।
গবেষকরা দেখেছেন, একজন মা তার সন্তানের গায়ের ঘ্রাণ বা গন্ধ দিয়েই অনুভব করতে পারেন তার সন্তানের অস্তিত্ব। শুধু মানুষ, প্রাণীদের মধ্যেও সম্পর্কের এমন তীব্রতা দেখা যায়। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এক্ষেত্রে শিশু বা সন্তানও কম যায় না।
জন্মের অতি অল্প সময়ের মধ্যেই শিশুটিও মায়ের শরীরের ঘ্রাণ বুঝে ফেলে। স্তন পান করা শিশুটির কাছে বিষয়গুলি আরও স্পষ্ট হয়। এমনকি মায়ের একটি স্তন থেকে অন্য স্তনকে তারা আলাদা করতে পারে। অনেক গবেষক বলেন, মায়ের শরীরের এই ঘ্রাণ অনুভব গর্ভে থাকা অবস্থা থেকেই শুরু হয়। গবেষকরা এর নামও দিয়েছেন ‘ফ্যারোমোন্স’ বা গন্ধবিজ্ঞান।
এই ফ্যারোমোন্সের কীর্তিকলাপ বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। ধারণা করা হয়, ঘ্রাণ বা গন্ধ বিষয়টি মা ও সন্তানের সম্পর্কের মূল শেকড় বা প্রাথমিক ভিত্তি। মা-শিশুর এই গন্ধ-গন্ধ রাসায়নিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া পরস্পরকে, বিশেষ করে শিশুটিকে নিরাপত্তার অনুভব দেয়।
গন্ধ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুটি বুঝতে পারে, তার খাদ্য গ্রহণ থেকে শুরু করে সমস্ত অনিশ্চিত বিষয়গুলো এখন নিশ্চিত। তখন কান্নারত শিশুটি কান্না থামিয়ে দেয়। তার ভীতসন্ত্রস্ত বা অনিশ্চিত ভাবটি নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। নিরাপত্তার এই প্রবল অনুভূতি মা-ই শেখান প্রতিটি সন্তানকে। এক্ষেত্রে মায়ের কোনো বিকল্প নেই।
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা বলছে, সন্তানের অনুভব তৈরির ক্ষেত্রে বাবার চেয়ে মায়ের আবেগের দিকটিই বেশি প্রাধান্য পায়। গবেষকরা বলছেন, সন্তানের আবেগ তৈরির ক্ষেত্রে বাবার চেয়ে মায়ের আবেগই বেশি অবদান রাখে।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘এটাচমেন্ট’ নামে আরও একটি শব্দ আছে। জন্মের পর শিশুরা কোনো একজনের ওপর নির্ভর করে। যাকে ‘এটাচমেন্ট’ বলা হচ্ছে। আর সেই নির্ভর করা মানুষটিকে বলে ‘এটাচমেন্ট ফিগার’। যার সঙ্গে বা সান্নিধ্যে শিশুটি সব ধরনের নিরাপত্তা অনুভব করে। আর সেই ‘এটাচমেন্ট ফিগার’টিই যে মা হয়ে থাকেন তাতে সন্দেহ নেই।