শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো, পড়া মনে রাখতে না পারা। পড়া ভালোভাবে মুখস্থ করা হলেও পরীক্ষার হলে গিয়ে অনেকটাই ভুলে যায়। শুধু বেশি সময় ধরে পড়লেই যে পড়া মনে থাকবে, এমন নয়। কিছু সঠিক কৌশল ও নিয়ম মেনে পড়তে হবে। তবেই পড়া সহজে মনে রাখা সম্ভব।
সঠিক সময় বেছে নেওয়া
পড়ায় মনোযোগী হতপ সঠিক সময় বেছে নেওয়া খুব জরুরি। ভোর ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত হতে পারে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কারণ এই সময় মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে এবং মনোযোগও বেশি থাকে।আবার রাতে ঘুমানোর আগে পড়ার অভ্যাস করলেও তা স্মৃতিতে বেশি সময় থাকে।
বুঝে পড়া
যেকোনো বিষয় মুখস্থ করার আগে তা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া জরুরি। অজানা কিছু মুখস্থ করতে গেলে সেটা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই পাঠ্যবিষয়ের মূলভাব বুঝে পড়লে তা অনেকদিন মনে থাকে। প্রয়োজনে শিক্ষক বা বন্ধুর সাহায্যে জেনে নিতে হবে কোন বিষয় কী বোঝাতে চাইছে।
সংক্ষেপে নোট তৈরি করা
নিজে হাতে লেখা সংক্ষিপ্ত নোট বা পয়েন্ট আকারে লেখা সারাংশ অনেক বেশি কার্যকর। এটি শুধু মনে রাখতে সাহায্য করে না, বরং রিভিশনের সময় বাঁচায়। প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো আলাদা করে রঙিন কলমে হাইলাইট করলে মনে রাখাও সহজ হয়।
বারবার রিভিশন
একবার পড়ে রেখে দিলে পড়া সহজে মনে থাকে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রথম পড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি কেউ তা আবার পড়ে, তাহলে তথ্য মস্তিষ্কে আরও শক্তভাবে গেঁথে যায়। তাই নিয়মিত রিভিশনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রথম রিভিশন ১ দিনের মধ্যে, দ্বিতীয়টি ৩ দিন পর এবং তৃতীয়টি ৭ দিনের মধ্যে করলে তথ্য মনে থাকার হার অনেক বাড়ে।
মনে রাখার টেকনিক ব্যবহার
কিছু স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কৌশল অনুসরণ করলে পড়া আরও সহজে মনে রাখা যায়। যেমন- মাইন্ড ম্যাপ, বিষয়বস্তুর মূল ধারণাগুলো একটি চিত্র বা চার্ট আকারে সাজানো। সংক্ষিপ্ত শব্দ, অনেক তথ্য একত্রে মনে রাখতে হলে প্রতিটি শব্দের প্রথম অক্ষর দিয়ে একটি শব্দ বানানো। রাইম বা ছড়া, কঠিন তথ্যগুলো ছন্দবদ্ধ করলে মনে রাখা সহজ হয়।
শব্দ করে পড়া
শব্দ করে পড়লে তা কানে আসে, ফলে চোখ, মুখ ও কানের মাধ্যমে তথ্যটি মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বা কাউকে বোঝানোর ভঙ্গিতে পড়াও কার্যকর। যাকে বলে "Feynman technique"। এটি মনে রাখার জন্য খুবই উপযোগী।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
ঘুমের সময় মস্তিষ্কে তথ্য সংরক্ষিত হয়। তাই পরীক্ষার আগে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি। যদি ঘুম ঠিকমতো না হয়, তাহলে পড়া মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। পড়ার ফাঁকে ৫–১০ মিনিট বিরতি নিলে মন রিফ্রেশ হয় এবং মনোযোগ বাড়ে।
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা
পড়া মনে রাখার জন্য শারীরিক সুস্থতা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে। দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত চাপ বা ভয় পড়া ভুলে যাওয়ার বড় কারণ।
সঠিক পদ্ধতিতে নিয়মিত অধ্যয়ন করাই হলো সফলতার মূল চাবিকাঠি। তাই পড়ার চেয়ে পড়ার পদ্ধতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।