মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য মহান আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রসুল পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে সবশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী ও রসুল হচ্ছেন মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ মসজিদে খায়েফে ৭০ জন নবী নামাজ আদায় করেছেন।
খায়েফ বলা হয় এমন স্থানকে যা পাহাড়ের ঢালু অংশে এবং পানির প্রবাহ থেকে উঁচুতে অবস্থিত। আবার দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকাসম ভূমিকেও খায়েফ বলে আরবরা। মিনার দক্ষিণে ছোট জামরার কাছে এ প্রাচীন মসজিদটি অবস্থিত। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় অবস্থানকালে এ মসজিদে নামাজ আদায় করতেন (তবারানি আওসাত: ৫৪০৭)।
হজের আনুষ্ঠানিকতার অন্যতম অংশ হলো- শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে কঙ্কর নিক্ষেপ করা। এই কঙ্কর নিক্ষেপের স্থানের খুব কাছে ঐতিহাসিক মসজিদে খায়েফ অবস্থিত।
মসজিদটি সওর পাহাড়ের বিপরীত দিকের পাহাড়ের অদূরে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদের আলোচনা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। বিশাল মসজিদটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে আসা হাজিদের মনে করিয়ে দেয় ইতিহাসের অনেক ঘটনাকে।
বৃহদাকার মসজিদের উচুঁ মিনারগুলো বেশ দূর থেকে পাহাড়ের চূড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নবীজি বিদায় হজে মসজিদে খায়েফে নামাজ পড়েছেন। এ মসজিদের অনেক ফজিলত হাদিস ও ইতিহাসের গ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে।
ইতিহাসে এসেছে, পঞ্চম হিজরিতে ইহুদিদের প্ররোচনায় মক্কার কাফেররা মদিনায় হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে তারা কিছু আরব গোত্রের সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করে। এই সন্ধি চুক্তি করার জন্য মক্কার কাফেররা যে স্থানটি বেছে নেয় পরে সেখানেই খায়েফ মসজিদ নির্মিত হয়। মূলত মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফের গোত্রগুলোর ঐক্যের ব্যর্থতার নিদর্শন হিসেবে মসজিদটি দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত ঘোষণা করছে, ইসলামের বিজয়গাঁথা ইতিহাসকে।
ঐতিহাসিক বর্ণনায় এসেছে, ২৪০ হিজরিতে এক প্রলয়ঙ্করী বন্যায় খায়েফ মসজিদ ধসে পড়ে। তবে বন্যা শেষ হওয়ার পরপরই মসজিদটি আবার নির্মাণ করা হয় এবং এর চারপাশে বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়।
সে সময় এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ছিল ১২০ মিটার এবং প্রস্ত ছিল ৫৫ মিটার। সে হিসাবে এটি ছিল ওই সময় আরব অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এমনকি তখন মসজিদে হারামের চেয়েও বড় ছিল এই মসজিদের আয়তন।
৮৭৪ হিজরিতে মিসরের মামলুকি সুলতান কাইতবা এই মসজিদ পুননির্মাণ করেন। মসজিদের ওই স্থাপনাটি কয়েক দশক আগ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।
এখন থেকে তিন দশক আগে ১৪০৭ হিজরিতে এই মসজিদ পরিবর্ধন ও পুননির্মাণের এক বিশাল পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মসজিদের আয়তন আগের চেয়ে চারগুণ বাড়িয়ে প্রায় ২৫ হাজার বর্গমিটার করা হয়। সূত্র : সময় টিভি