বাঙালি নারীর পোশাকে প্রথম পছন্দ জামদানি শাড়ি। বাঙালিয়ানা লুক দিতে জামদানি শাড়ির বিকল্প কমই রয়েছে। নারীরা এই শাড়িতে যতটা সুন্দর হয়ে উঠে ততটাই আরাম পায়। এই শাড়ির শিকড় জুড়ে আছে বাংলাতেই। দুই বাংলার শিল্পীদের বিশেষ মুনশিয়ানায় তৈরি হয় জামদানি শাড়ি। ঢাকাই জামদানির বিশ্বখ্যাতি রয়েছে। এই শাড়ি প্রত্যেক বাঙালি নারীকেই দারুণ মানিয়ে যায়। প্রিয় এই জামদানি শাড়ি সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য রয়েছে। বাঙালি হিসেবে ঐতিহ্যবাহী এই শাড়ির মজার তথ্যগুলো জেনে রাখুন।
ফুলের সঙ্গে সম্পর্ক
জামদানি শব্দটি কীভাবে এলো জানেন কি? এই নামের অর্থের সঙ্গে বিশেষ ইতিহাসের যোগ রয়েছে। জামদানি শব্দটির উৎপত্তি ফারসি শব্দ থেকে। ফুলের মোটিফ ফুটিয়ে তোলা মসলিন বা সুতির কাপড়ের টুকরোকে বলা হয় ‘জাম’ আর তার সঙ্গে যুক্ত হয় ‘দানি’। এরপরই নাম হয় জামদানি। ফুলের দানি বোঝাতেও জামদানি শব্দটি ব্যবহার হয়।
রাজকীয়তা
জামদানি শাড়ি ছিল রাজপরিবারের মানুষের বিশেষ পোশাক। দেশের ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যায়, মুঘলদের সংস্কৃতির বিশেষ প্রভাবও ছিল তৎকালীন জামদানি শাড়িতে। ওই সময় পেইন্টিংয়েও জামদানি মোটিফের প্রভাব ছিল। জামদানি কাপড়ের দামও ছিল চড়া। তাই শুধুমাত্র রাজপরিবারের নারীরাই এই পোশাক পরতেন। যদিও পরবর্তী সময়ে শিল্পীরা সর্বসাধারণের জন্য় জামদানি বুনতে শুরু করেন। এরপরই এই শাড়ি সব নারীর আলমাড়িতে জায়গা করে নেয়।
চড়া দাম
জামদানি শাড়ি দাম ছাড়াতে পারে এক লাখও। কাপড়ের মান, শিল্পীর মুনশিয়ানা, সুতোর ব্যবহার এবং জরির কারুকার্যের উপরে দাম অনেকটাই নির্ভরশীল। ভালো মানের হাতে বোনা জামদানির দাম এক লাখ টাকারও বেশি হয়। এই শাড়ি তৈরিতে প্রচুর শ্রম দেন কারিগররা। তাই সেই শাড়ির দামও হয় চড়া। তাই অবাক হবেন না। জামদানি শাড়ির এই বিশেষত্বই ফ্যাশন দুনিয়ায় আলাদা জায়গা করে দিয়েছে।
প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার
জামদানি শাড়ির ইতিহাস থেকে জানা যায়, আগে এই শাড়িতে শুধুই প্রাকৃতিক রং ব্যবহার হতো। ফুল-পাতার নির্যাস থেকে তৈরি হতো রং। সেই রঙে রাঙানো হত জামদানি শাড়ি। এখনও অনেক শিল্পী সেই ঐতিহ্যকেই ধরে রেখেছেন।
বাংলার নিজস্বতার ছোঁয়া
বাঙালিদের ঐতিহ্যের অংশ হচ্ছে মসলিন কাপড়। জামদানি তৈরিতেও এই ফ্যাব্রিকের উল্লেখ রয়েছে। কারিগররা মসলিন এবং সুতির সুতোর উপরেই জামদানি বুনন করতেন। তাছাড়া বাঙালির নাগরদোলা, লাউ লতিকা এবং ফুলের নানা মোটিফ ট্র্যাডিশনাল জামদানিতে ফুটিয়ে তোলা হতো। তাই জামদানি শাড়িতে বাংলার নিজস্বতার ছোঁয়া পাওয়া যায়।