নিরাপদ সড়কের জন্য নির্ধারিত ট্রাফিক আইন মানা অত্যন্ত জরুরি। অতি সাধারণ কিছু ট্রাফিক আইন রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় আর খেয়ালিপনায় এসব ট্রাফিক আইন মানতে আমাদের অনীহা থাকে। একজনকে আইন ভঙ্গ করতে দেখে অন্যজনও অনুপ্রাণিত হন। এরপর শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যান। তাই ট্রাফিক আইনের কঠোরতা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনে জরিমানা ধার্য করে ট্রাফিক আইন মানার ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন অনেকে। অথচ একটু সচেতন হলেই এমন বিশৃঙ্খলা ও কঠোরতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। সাধারণ কিছু ট্রাফিক আইন মেনে চললেই নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা পেতে পারে পুরো জাতি।
· রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক লাইটের দিকে অনেকেই খেয়াল করি না। এর পরিবর্তে হাতের ইশারায় গাড়ি থামিয়েই রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। অনেকে সড়ক বিভাজক টপকিয়ে পারাপার করছেন। এই অনিয়ম নিয়মিত চিত্র। অথচ এতে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যায়। ট্রাফিক আইন অনুযায়ী, হাতের ইশারায় কিংবা বিভাজক টপকে গাড়ি থামিয়ে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ফুট-ওভারব্রীজ, আন্ডারপাস বা জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করায় সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
· গণপরিবহনের যাত্রীরা যেকোনো স্থানেই উঠা-নামা করছেন। নির্দিষ্ট বাস স্টপে না নেমে সুবিধা মতো জায়গায় নামছেন। আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত গাড়িতেও উঠে পড়ছেন। ট্রাফিক নিয়মে স্পষ্ট বলা রয়েছে, `চলন্ত গাড়িতে ওঠা ও নামা থেকে বিরত থাকুন`। নির্ধারিত স্থান থেকেই বাসে ওঠা আর নির্ধারিত স্থানেই নেমে গেলে সড়ক দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা অনেকটাই কমে যাবে।
· রাস্তা পারাপারের সময় অনেকেই মোবাইল ফোনে কথা বলেন। আবার ইয়ারফোনে গান শোনেন। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তা পারাপারের সময় দুই পাশের গাড়ির দিকে নজর রাখা জরুরি। জেব্রাক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের সময়ও ইয়ারফোন ব্যবহার করা ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ঠিক নয়।
· রাস্তায় যাত্রী চলাচলের জন্য ফুটপাতের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ফুটপাতে না হেটে রাস্তার মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে হেটে যাই। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকেই এমনটা করি। অথচ ট্রাফিক নিয়ম অনুযায়ী, ফুটপাতে পাশাপাশি নয় বরং সারিবদ্ধ হয়ে হাঁটতে হয় এবং অন্যপাশ দিয়ে মানুষ চলাচলের সুযোগ দিতে হয়। যেসব রাস্তায় ফুটপাত নেই, সেখানে ডান পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়। যা আমরা অনেকেই মেনে চলি না। তাই নির্দিষ্ট ফুটপাত ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে যেতে হবে।
· রাস্তা কিংবা ফুটপাত দখল করে অনেকেই দোকান সাজিয়ে বসেন। যা দণ্ডনীয় অপরাধ। সড়কে গাড়ি পার্ক করে রাখা, দোকান নিয়ে বসা, ইট, রড, সিমেন্টের মতো নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা যেন স্বাভাবিক ঘটনা। যা গাড়ি চলাচলে অসুবিধা করে। তাই এসব অবৈধ দখল থেকে সড়ককে মুক্ত রাখতে হবে।
· শহরের রাস্তায় এখন অনেকে গাড়িই চলে। কিন্তু অধিকাংশ গাড়ির চালকদেরই সিট বেল্ট পরায় অনীহা থাকে। অথচ আইন অনুযায়ী, চালক ও চালকের পাশের সিটে কেউ বসলে উভয়কেই সিটবেল্ট বাঁধতে হবে। এই বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
· সাইকেল বা মোটর সাইকেল চালকেরা হেলমেট ব্যবহার করতেও অনীহা দেখান। আবার আরোহীদের বেশির ভাগই হেলমেট ছাড়াই মোটরসাইকেলে চড়েন। অথচ নিজের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। হেলমেট চালক ও আরোহী দুজনকেই হেলমেট পরতে হবে। এছাড়াও একটি মোটরসাইকেলে ৩ জন ওঠাও অপরাধ। এটি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই মোটর সাইকেল চলাচলে আরও সতর্ক হতে হবে।
· ব্যস্ততম শহরে সবাই গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছাতে ছুটে বেড়ায়। শহরের পথে যানজট লেগেই থাকে। তাই দ্রুত গন্তব্যে পৌছাতে উলটো পথেও গাড়ি চালাতে দেখা যায়। রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল চালকরা এমন ঘটনা বেশি করে। যা সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে দেয়। তাই সড়কের নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোই উত্তম।
· দ্রুত গন্তব্যে পৌছানোর জন্য অনেক চালকই ঘন ঘন লেন পরিবর্তন করেন। ওভারটেক করেন কিংবা যেদিকে তুলনামূলকভাবে যানবাহন কম, সেদিকে গাড়ি চালিয়ে দেন। এটিও নিয়ম ভঙ্গের অংশ। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনাও বেশি ঘটে। তাই সড়কের এসব ট্রাফিক আইন নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
· সড়কের ওপর গাড়ি পার্কি করার চিত্র নিয়মিত ঘটনা। নো পার্কিং জোনেও গাড়ি পার্ক করে রাখেন অনেকে। যা সড়কের বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। ট্রাফিক আইনে বলা রয়েছে, ইন্টারসেকশনে এবং রাস্তায় যাত্রী উঠা-নামা থেকে বিরত থাকুন। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া গাড়ি পার্কিং বা বাস থামানো যাবে না। এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই গাড়ী থামানো সময় রাস্তার বাম ঘেঁসে যাত্রী নামানো আর নির্দিষ্ট স্থানেই গাড়ি পার্কিং করার নিয়ম মানতে হবে।