আসছে ঈদ আনন্দ। আর মাত্র কয়েক দিন পরই ঈদ। ধর্মীয় এ উৎসবের আগে ত্বকের যত্ন নেওয়া তাই অত্যন্ত জরুরি। কেননা, ঈদ এবং ঈদের পরবর্তী সময়ে বেড়াতে যাওয়ার একটা প্রচলন আছে। তা ছাড়া ঘরে আসা অতিথি আপ্যায়ন তো আছেই। ঈদের সময়টাতে নিজেকে বিশেষভাবে দেখাতে কমবেশি সব নারীরাই এখন ছুটছে পার্লারে। অন্যদিকে ঈদের আগ মুহূর্তে পার্লারে অনেক ভিড় থাকায় সিরিয়াল পাচ্ছেন না অনেকে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে পার্লারের দরজায়।
তবে আপনি চাইলে ঘরে বসেই পার্লারের মতো ফেসিয়াল, মেনিকিউর ও পেডিকিউর করতে পারেন। ঘরে থাকা কয়েকটি উপকরণ ব্যবহার করেই পার্লারের মতো ত্বকের যত্ন নেওয়া সম্ভব।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে ঘরে বসেই পার্লারের মতো ত্বকের যত্ন নেবেন, সে সম্পর্কে।
ফেসিয়াল যেভাবে করবেন
- প্রথমে কমলালেবুর খোসা ভালো করে গুঁড়া করে নিন। যদি কমলার খোসার গুঁড়া ঘরে থাকে তাহলে ঝামেলা কম হবে। তার সঙ্গে হলুদগুঁড়া মিশিয়ে নিন। এরপর গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে অল্প পানি দিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। ২-৩ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
- এবার তৈরি করে নিন স্ক্রাবার। এ জন্য চিনি, হলুদের গুঁড়া, অলিভ অয়েল ও পছন্দের এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর তা দিয়ে মুখ কিছুক্ষণ স্ক্রাব করে তারপর ধুয়ে নিন। স্ক্রাবিং করার ফলে ত্বকের মৃতকোষ দূর হয়। ফলে ত্বক হয় আরও উজ্জ্বল ও কোমল।
- ফেসিয়ালের এ পর্যায়ে কয়েক মিনিট গরম ভাপ নিন মুখে। এতে ত্বকের লোমকূপগুলো নরম হয়ে যাবে। ফলে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস হালকা চাপ দিলেই বেরিয়ে আসবে। একটি ব্রণ স্টিক দিয়ে ত্বকের ব্ল্যাকহেডস রিমুভ করে মুখ ধুয়ে নিন।
- টোনার হিসেবে গোলাপ জল বা নিম পাতার পানি ব্যবহার করতে পারেন। টোনার ব্যবহার করতেই দেখবেন ত্বকে সতেজভাব ফিরে এসেছে।
- ফেসিয়ালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শেষের ধাপ হলো ফেসপ্যাকের ব্যবহার। হলুদ গুঁড়া, সামান্য ময়দা, মধু ও টকদই মিশিয়ে আপনি ঘরেই তৈরি করে নিন ফেসপ্যাক।
- এতে থাকা সব কটি উপাদনই ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী। অন্তত ১০ মিনিট ত্বকে রাখুন এই ফেসপ্যাক। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- সবশেষে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এবার দেখুন ত্বক কতটা উজ্জ্বল ও কোমল হয়েছে।
মেনিকিউর-পেডিকিউর যেভাবে করবেন
- প্রথমে একটি জায়গা ঠিক করুন, যেখানে আপনি ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করবেন। মেঝেতে তোয়ালে বা খবরের কাগজ বিছিয়ে তার ওপর একটি চেয়ার রাখুন। তার সামনে একটি ছোট টেবিলে রাখুন মেনিকিউর-পেডিকিউর করার সব সরঞ্জাম।
- অন্যদিকে একটি বালতি বা বড় গামলায় হালকা গরম পানি নিন। এমনভাবে পানি নিন, যার মধ্যে আপনি হাত-পা ডুবিয়ে রাখতে পারবেন। তবে হাত-পা ভেজানোর আগে তা ভালোভাবে হালকা সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর স্যানিটাইজার দিয়ে হাত-পা স্যানিটাইজ করুন।
- প্রথমে হাত-পায়ের নখে থাকা নেইলপলিশ রিমুভ করে নিন। তারপর গরম পানির মধ্যে পা ও হাত ভিজিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এরপর আরেকটি পাত্রে হালকা গরম পানি নিয়ে তার মধ্যে ২ টেবিল চামচ গরম নারকেল তেল মিশিয়ে তার মধ্যে আপনার হাত-পা ১০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন।
- হাত ও পায়ের মরা চামড়া দূর করতে স্ক্রাব ব্যবহার করা জরুরি। এ জন্য তৈরি করে নিন ডিআইওয়াই স্ক্রাব। ৯ টেবিল চামচ টকদইয়ের সঙ্গে ৬ টেবিল চামচ চিনি ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করুন স্ক্রাব। মিশ্রণটি আপনার একবার পায়ে ও পরে হাতে লাগিয়ে ২-৩ মিনিট আলতোভাবে ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিন। এরপর আপনার হাত ও পা মুছে নিন।
- এবার হাত-পায়ের নখ পরিষ্কার করার পালা। তারপর নখ পরিষ্কার করতে একটি নরম-ব্রিস্টেড পরিষ্কার টুথব্রাশ ব্যবহার করুন। তারপর নখের কিউটিকলগুলো তুলে ফেলুন। এ জন্য অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে কিউটিকল পুশার।
- আপনার যদি কিউটিকল পুশার না থাকে তবে আপনি ওয়াশক্লথ ব্যবহার করতে পারেন। কিউটিকল একেবারে কাটবেন না, কারণ এগুলো ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে নখকে রক্ষা করে। কিউটিকলকে নরম ও সুস্থ রাখতে একটু নারকেল তেল লাগিয়ে নখের চারপাশের ত্বকে ম্যাসাজ করুন।
- এবার নেইল কাটার দিয়ে নখগুলো ভালো করে কেটে নিন। তারপর একটি আলাদা নেইল ফাইল বা আপনার নেইল কাটার দিয়ে ফাইল করুন।
- নখের হলুদ দাগ ও মসৃণভাব আনতে চাইলে নেইল বাফার বাফার ব্যবহার করুন। এতে নখ হবে আরও মসৃণ ও ঝকঝকে। চাইলে একটি রসুনের কোয়া নখে ঘষলেও পাবেন মসৃণ নখ।
- এ পর্যায়ে টিএলসি লোশন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার হাত-পা ম্যাসাজ করুন। লোশন বৃত্তাকার গতি ব্যবহার করুন। এই ম্যাসাজের জন্য আপনি যতটা চান সময় নিতে পারেন। চাইলে লোশনে এক দুই ফোঁটা নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। ব্যস হয়ে গেল মেনিকিউর-পেডিকিউর।
- যারা নেইলপলিশে নখ রাঙাতে চান, তারা প্রথমে বেস কালার দিয়ে নিন। তারপর পছন্দের রঙের নেইলপলিশ ব্যবহার করুন। যারা নখে বিভিন্ন ডিজাইন করতে চান, তারা সতর্কতার সঙ্গে তা করুন। তারপর ভালোভাবে নেইলপলিশ শুকিয়ে নিন।