আবন্তির বয়স সাত বছর। ওকে নিয়ে বড়ো সমস্যায় আছে নীরব আর শম্পা। মেয়েটা এমনিতে খুব লক্ষ্মী। কিন্তু সারাক্ষণ দাঁত দিয়ে নখ কাটে। পড়ার সময়, খেতে বসে, স্কুলে গিয়ে, শপিং সেন্টারে ঢুকে এমনকি ঘুমের মধ্যেও মেয়েটা দাঁত দিয়ে নখ কেটে চলেছে। অনেক চেষ্টা করেও ওরা তার এই বদভ্যাস দূর করতে পারছে না। মেয়ের এমন বদভ্যাসে নীরব ও শম্পা দম্পতিকে মাঝেমধ্যে অন্যের সামনে বিব্রতও হতে হয়।
দাঁত দিয়ে নখ কাটা, আঙুল মুখে দেওয়া, পড়তে বসে পা নাচানো, ঠোঁট কামড়ানো, হাত না ধুয়ে খাবার মুখে দেওয়া— ছোটদের এমন নানা বদভ্যাসে বাবা-মায়েরা হামেশাই জেরবার হয়ে ওঠেন। ছোট বয়স থেকেই উচিত এমন বদভ্যাস দূর করা কারণ তা না হলে পরে তা এমনভাবে জাঁকিয়ে বসে যে, তা থেকে বেরিয়ে আসা বেশ শক্ত হয়ে ওঠে। নতুন কোনো জিনিস যেমন ছোটরা খুব সহজে আয়ত্ত করতে পারে, তেমনই একটু চেষ্টা করলেই পারে বদভ্যাস থেকে দূরে সরে আসতেও। এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর বদভ্যাস দূর করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিশু রোগ বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. আশরাফ উল হকের কিছু পরামর্শ মাথায় রাখুন।
• শিশুর বদভ্যাসের পিছনের কারণটা খুঁজে বের করুন। অনেকসময় মানসিক চাপ, স্ট্রেস , ডিপ্রেশন বা রাগ থেকেও শিশুরা বিভিন্ন বদভ্যাসের বশবর্তী হয়ে পড়ে। বিভিন্ন আবেগের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্যই ওরা এগুলো করে। বড়দের কাছে দেখতে খারাপ লাগলেও, শিশুরা বদভ্যাস থেকে এক ধরনের শান্তি বা আরাম পায়, সেইজন্যই বারবার নিষেধ করার পরও ওরা এগুলো থেকে বের হতে পারে না।
• শিশুরা অনেকসময় বড়দের নকল করে। তাই পরিবারে বড় কারো এমন কোনো বদভ্যাস থাকলে আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে।
• প্রায় সব শিশুর মধ্যেই একদম ছোট বয়সে আঙুল চোষা বা মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই অভ্যাস একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যায়। কিছু কিছু শিশুর চার বছর পার করার পরও এই অভ্যাস থেকে যেতে দেখা যায়। নতুন দাঁত ওঠার পরও শিশু যদি সারাক্ষণ আঙুল মুখে দেয় তাহলে এর জন্য দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে যেতে পারে। ওকে এমন কিছু খেলনা দিন যাতে ওর দুটো হাতই ব্যবহার করতে হয়। প্রয়োজনে শিশুর আঙুলে একটু করলার রস লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে ধীরে ধীরে ওর এই বদভ্যাস দূর হবে। কিন্তু ছয় বছর পার করার পরও যদি এমন অভ্যাস থেকে যায় তাহলে কিন্তু তা ওর স্ট্রেস বা নিরাপত্তাহীনতার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
• শিশুকে বারবার বদভ্যাস দূর করতে সতর্ক করবেন ঠিকই কিন্তু ওর দিকে অতিরিক্ত নজর দেবেন না। ‘ছি’, ‘নোংরা’ এই জাতীয় শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে অনেকসময় শিশু মজা পেয়ে আরও বেশি করে এই ধরনের কাজ করতে উৎসাহী হয়।
• সারাদিনে শিশু যদি একবারও তার বদভ্যাসের কাজটা না করে তাহলে সেজন্য তাকে উপহার দিন। এতে ও বদভ্যাস দূর করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
• শিশুকে বোঝাবেন, কিন্তু বকাঝকা বা মারধোর করবেন না। ওকে বোঝান ওর এই বদভ্যাসের কারণে নানারকম অসুখ হতে পারে। প্রয়োজনে ও যার খুব কথা শোনে, তার সাহায্য নিন। তিনি হতে পারেন শিশুর শিক্ষক, মামা, কাকা, নানা, দাদা বা শিশুর প্রিয় যেকোনো ব্যক্তি। তাকে দিয়ে বোঝালে শিশু এমন বদভ্যাস থেকে বের হয়ে আসবে।