বড়দিন উৎসবে সবার প্রিয় সান্তাক্লজ। লাল টুপি পরা সান্তাক্লজ থেকে উপহার নেওয়া, তার সঙ্গে নেঁচে-গেয়ে আনন্দ উৎসব পালন করেন খ্রিস্টান ধর্মাম্বলীর ছোট-বড় সবাই। বড়দিনের উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই চরিত্রটি। গুরুত্বপূর্ণ হলেও, কীভাবে 'ঐতিহাসিক' এই চরিত্রটি মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে সেই গল্প অনেকেরই অজানা।
'ঐতিহাসিক' চরিত্র সান্তাক্লজের অস্তিত্ব নিয়ে এক এক মহাদেশ ও উপমহাদেশে এক এক কাহিনী রয়েছে। তবে ডাচ লোককাহিনী থেকে সান্তাক্লজের অস্তিত্বের কথা জানা যায় অন্যভাবে।
'সান্তাক্লজ রূপকথার কোনো গল্প নয়' ডাচ লোককাহিনীতে এমনটাই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।ডাচ লোককাহিনী অনুযায়ী, আজকের লালটুপি পরিহিত এক দাঁড়িওয়ালা বুড়ো সান্তাক্লজ দেখতেও নাকি এমনটা ছিলেন না। শুধু তাই নয়, আনন্দ ফেরিওয়ালার আসল নামও ছিল না 'সান্তাক্লজ'।
তবে কীভাবে এল আনন্দের এই ফেরীওয়ালা? সেই গল্প জানতে ডাচ লোককাহিনীতে ঘুরে আসতে হবে। সেখানে বর্ণিত রয়েছে, চতুর্থ শতকে টার্কিতে এক ছোট্ট বন্দর ছিল। যার নাম ছিল মায়রাহ। সেখানেই থাকতেন এক ক্রিশ্চান বিশপ সেন্ট নিকোলাস। সমুদ্র সফরের আগে নাবিকরা ওই ব্যক্তির কাছ থেকেই আশীর্বাদ নিতেন। সদ্য বিবাহিতরাও সেই ক্রিশ্চান বিশপের কাছে আসতেন আশির্বাদ নিতে। কালে কালে সেই ব্যক্তিই হয়ে উঠেন সন্ত নিকোলাস।
লিসিয়ায় প্রকাশিত বই- "Life, Works, and Miracles of our Holy Father Nicholas, Archbishop of Myra" থেকে জানা যায় এর পেছনের গল্পটি। বইটিতে লেখা হয়, সন্ত নিকোলাস ছোট থেকেই দেবত্ব স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। একটি ঘটনায় তিনি সবার প্রিয় 'সান্তা' হয়ে উঠেছেন।
বইটি থেক জানা যায়, ওই শহরেই এক হত দরিদ্র পরিবার ছিল। তিন মেয়ের বিয়ের দেওয়ার মতো ক্ষমতাও ছিল না সেই পরিবারের। টাকা যোগাড় করতে মেয়েদের পতিতালয়ে পাঠানোর ভাবনাও ছিল তাদের বাবার। সেই কথা গোপনে কানে আসে নিকোলাসের। এরপর রাতে ওই ব্যক্তির ঘরে গিয়ে নিজের টাকার ব্যাগ রেখে আসেন নিকোলাস। পরের দিন সেই টাকা পেয়ে মেয়েদের বাবা ভেবে নেন, এটি বোধ হয় ঈশ্বরের দান। এভাবেই প্রতিটি মেয়ের বিয়ের জন্য়ই তাদের ঘরে টাকা দিয়ে আসতেন নিকোলাস। তৃতীয় মেয়ের বিয়ের সময় ধরা পড়ে যান তিনি। এরপরই চারপাশ রটে যায়। মুখে মুখে নিকোলাসে এই আনন্দ ফেরির বিষয়টি রটতে থাকে। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে ওই এলাকার সন্ত হয়ে ওঠেন নিকোলাস।
বইটির উপসংহারে সেন্ট নিকোলাসকেই সান্তাক্লজে রূপান্তরিত করা হয়। যিনি সবার কষ্টের পরিত্রাতা ছিলেন। গত দেড় হাজার বছর ধরে এমনভাবেই সান্তাক্লজকে দেখা হয়।
যদিও এই কাহিনীর সত্যতা নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছেন ইতিহাসবিদরা। তাদের মতে, রঙিন পোশাক পরা সান্তাক্লজকে নিয়ে সেই বইতে তেমন কোনও বর্ণনা পাওয়া যায়নি।
১৮২৩ সালে ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে আমেরিকার বিখ্যাত লেখক ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুরের লেখা ‘A visit from St. Nicholas’ কবিতায় লাল টুপি পরা লাল পোশাকে সান্তার রূপ দেখা যায়। পরে ১৮৮১ সালে আমেরিকান কার্টুনিস্টের থমাস ন্যাসটের আঁকা ছবিতে রূপ পায় সান্তাক্লজ। সেই ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরই লাল পোশাক আর টুপির সাজে সান্তাক্লজ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
কার্টুনিস্টের থমাস ন্যাসটের আঁকা ছবিতে দেখা যায়, হরিণটানা গাড়িতে চড়ে কাঁধে উপহারভর্তি ঝোলা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের উপহার দিচ্ছেন সান্তাক্লজ। এরপরই বড়দিনে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেন সান্তাক্লজ। বিশ্বজুড়ে এখন তাকে 'ফাদার খ্রিস্টমাস' হিসাবেই আখ্যায়িত করে।
ডাচ লোককথা অনুসারে, সন্ত নিকোলাস থেকে সিন্টারক্লস এবং শেষে সান্তাক্লজ হয়ে উঠেছেন ওই ব্যক্তি। বয়সে প্রবীন তাই সাদা দাড়িতে তাকে রূপায়িত করা হয়। তিনি ছিলেন উদারতার প্রতীক। যার উপহার পেতে বড়দিনের আগের দিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে শিশুরা।
ডাচ লোককথা অনুসারে, সান্তাকে সন্ত বলা হয়। তিনি এমন এক চরিত্র, যিনি কোনও ধর্মের ভেদাভেদ মানেন না। দেশ-সীমান্ত-উৎসব কোনও কাঁটাতারই আটকাতে পারে না তার হরিণটানা গাড়িকে।
খ্রিষ্টীয় ধর্ম মতে, সান্তা রয়েছেন আমাদের সবার জীবনেই। জীবনে ভালোলাগা ছড়িয়ে দেওয়া ব্যক্তিরাই সান্তা হয়ে ওঠেন। লোকাকাহিনীর মতো সান্তা বাস্তবেও রয়েছেন। যিনি আনন্দ আর খুশি ছড়িয়ে দিতে আসেন সবার জীবনে। তিনি এখন বড়দিনের আনন্দের ফেরিওয়ালা।
সূত্র- The World Encyclopedia of Christmas