কঠোর লকডাউনের পর খুলে গেছে সবকিছু। গণপরিবহন, অফিস-আদালত, বিনোদনকেন্দ্র সবকিছু চলছে পূর্ণ গতিতে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সংক্রমণ কমাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন হওয়াই এখন একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন তারা।
সাধারণ মানুষ ঘরে-বাইরে কাজের তাগিদে ছুটছেন। এর মধ্যেও করোনা সংক্রমণের কথা ভুলে গেলে চলবে না।ঘরে বাইরে, রেস্তোরাঁয় বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখার উপদেশ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বদ্ধ পরিবেশে কীভাবে করোনা সংক্রমণ এড়াবেন, এ বিষয়ে ৫টি পরামর্শ দিয়েছেন।
বদ্ধ পরিবেশ এড়িয়ে চলুন
করোনা সংক্রমণ রোধে বদ্ধ পরিবেশ এড়িয়ে চলাই উত্তম। কোনো কক্ষে প্রবেশ করে যদি বুঝতে পারেন সেখানে বাতাস পরিষ্কার নয়, বরং ভারী বা বাসি মনে হচ্ছে তাহলে বুঝে নেবেন সেই কক্ষে বায়ু চলাচলে সমস্যা রয়েছে। এই ধরনের পরিবেশ কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কম জায়গায় ভাইরাসের বায়ুবাহিত সংক্রমণ হতে পারে। কারণ বাতাসে ভাইরাসের ক্ষুদ্র কণা ভেসে বেড়াতে পারে। চার্টার্ড ইনিস্টিটিউশন অব বিল্ডিং সার্ভিসেস ইঞ্জিনিয়ার্সের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ড. হাইওয়েল ডেভিড বলেন, ‘যদি কোনো স্থানের পরিবেশ ভারী মনে হয় তাহলে সেখানে বেশিক্ষণ না থেকে চলে যেতে হবে। তার মতে, কোনো একটি ভবনে কেউ আক্রান্ত হলে সেখানে সতেজ বাতাসের ব্যবস্থা করতে পারলে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার কমান
এয়ার কন্ডিশনারের কাজ হচ্ছে ঘরের বাতাসকে শোষণ করে ঠান্ডা করে আবারও তা ঘরে ছেড়ে দেওয়া। অল্প সময়ের জন্য এটি ব্যবহার করলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই ধরনের পরিবেশে থাকতে হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
চীনের একটি রেস্তোরাঁয় এই বিষয়ে গবেষণা চালানো হয়। এ গবেষণায় কোভিড সংক্রমণের জন্য এয়ার কন্ডিশনারকে দায়ী করা হয়। সেখানে দেখা যায়, সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাসপ্রশ্বাস এবং কথা বলার সময় ভাইরাস এয়ার কন্ডিশনারের মাধ্যমে পুরো কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে আরও অনেকে আক্রান্ত হোন।
নির্মল বাতাস চলাচল বাড়ান
যেসব ভবনে জানালা বন্ধ থাকে, সেখানে সতেজ বাতাস চলাচল বেশ কঠিন। এসব ক্ষেত্রে নির্ভর করতে হয় ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার ওপর। তবে বিশেষজ্ঞরা সতেজ এবং নির্মল বায়ুর সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
ইউনিভার্সিটি অব লিটসের শিক্ষকরা বলেন, ‘বাতাস যত তাজা হবে, বাতাসের মাধ্যেম ওই ভবনে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি তত কমবে।
ভেন্টিলেটরের ফিল্টার চেক করুন
আধুনিক ভেন্টিলেশন ব্যবস্থায় ফিল্টার থাকে। তবে এসব ফিল্টারও পুরোপুরি সুরক্ষা দেয় না। যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি হসপিটালের এক গবেষণায় দেখা যায়, করোনাভাইরাস ফিল্টারে আটকে গেলেও এর কিছু কিছু গলিয়ে বের হয়ে আসে। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক কেভিন ভেন জেন ওয়াইর মিলেন বার্গ বলেন, ‘ফিল্টার নিয়মিত পরীক্ষা করার মাধ্যমে বোঝা সম্ভব যে ভবনে কেউ আক্রান্ত রয়েছেন কিনা।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কল সেন্টার ভবনের ১১ তলায় একজন সংক্রমিত হওয়ার পর তিনি আরও ৯০ জনকে সংক্রমিত করেছিলেন। সেখানে যদি ফিল্টার নিয়মিত চেক করা হতো, তবে এত ব্যক্তি সংক্রমিত হতেন না।
ভাইরাস রয়েছে এমন বাতাস এড়িয়ে চলুন
সতেজ বাতাসের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু যুক্তরাজ্যের সুপারমার্কেটে ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কোম্পানিতে বাতাস চলাচল ব্যবস্থাপনায় উপদেষ্টা হিসাবে কর্মরত নিক ইয়ার্ক বলেন, ‘সব সময় সতেজ বাতাসও সংক্রমণ ঠেকায় না। কোভিড আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি খোলা জানালার পাশে বসেন তাহলে বাতাসের মাধ্যমে অন্যদেরও সংক্রমিত করতে পারে। তাই বাতাসও ভাইরাসমুক্ত কি না, সেটি খেয়াল রাখা জরুরি।’
সূত্র: বিবিসি