• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ঈর্ষা এনে দিবে সফলতা!


ইশতিয়াক হোসেন
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২২, ০২:৩২ পিএম
ঈর্ষা এনে দিবে সফলতা!

স্কুল কলেজে লেখাপড়ার সময় প্রথম হওয়া ছাত্র ছাত্রীদের দেখে কার না ঈর্ষা হতো। অথবা চাকরির  ক্ষেত্রে পদন্নোতি পাওয়া সহকর্মীকে দেখেও ঈর্ষা তো হবেই। অনেকে এই ভেবে মন কষ্টে ভোগে যে  কঠোর পরিশ্রমের পরও জীবনের গতি তেমন আগাচ্ছে না! অথচ অনেকে একই পরিশ্রম করে কতো  দ্রুত ঈর্ষনীয় উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। পড়ালেখা, চাকরি কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য হোক সবক্ষেত্রে উন্নতির জন্য আমরা কতো কিছুই না করি। অন্যেরা কীভাবে পারছে? আমি কেন পারছি না? এমনটা ভেবে হীনমন্যতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা অনেক। মজার বিষয় হচ্ছে, ঈর্ষা বা হিংসা উন্নতি অগ্রগতির জন্য বড় নিয়ামক, এটা অনেকেরই উপলব্ধিতে আসে না।

ঈর্ষা বা হিংসাকে উন্নতির বাহক কীভাবে বানানো যায়?

প্রথমে জেনে নিতে হবে, ঈর্ষা বা হিংসা শব্দের মানে কী? বাংলা অভিধানে এই দুটি শব্দ সমার্থক হিসেবেই পাওয়া যায়। তবে ব্যবহারের সময় কিছুটা ভিন্নতা আছে। ঈর্ষা বলতে পরশ্রীকাতরতা বোঝায়। মানে অন্য কারো রূপ, সৌন্দর্য, অর্জন, দক্ষতা ইত্যাদি নিজের মাঝে অনুপস্থিতির কারণে হীনমন্যতা উপলব্ধি হওয়া মানেই ঈর্ষা। ঈর্ষান্বিত মানুষ মনে মনে অসন্তুষ্ট থাকে। অন্যের উন্নতি সফলতা তাকে সর্বক্ষণ ভাবায়। ফলে নিজেকে ব্যর্থ বিফল অকৃতকার্য মনে হয়। নিয়ন্ত্রিত ঈর্ষা কিন্তু ভালো। কারণ এই নিয়ন্ত্রিত ঈর্ষা একজন ব্যক্তিকে উন্নতির পথে ধীর স্থিরভাবে ভেবে চিনতে এগিয়ে নিতে সহায়ক হয়। আবার অনিয়ন্ত্রিত ঈর্ষা থাকলে জীবন দূর্বিষসহ হয়ে পড়ে।

অন্যদিনে অনিয়ন্ত্রিত ঈর্ষা যখন তার সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন তাকে হিংসা বলে। হিংসা ব্যক্তির বিধ্বংসী আচরনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। হিংসা অন্যের সফলতা সহ্য করতে না পেরে ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায় জাগায়।

প্রথমে বোঝার চেষ্টা করুন, আপনার মধ্যে উপরের কোনটি আছে। ঈর্ষা বা হিংসা নিজের প্রতি সচেতনতা বাড়ায়, নিজের দুর্বলতা, ক্রটি, সক্ষ্যমতা ইত্যাদি নিয়ে ভাবায়। নিজের উন্নতি, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন,  সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগানো থেকে ঈর্ষাহীন মানুষ সবসময় পিছিয়ে থাকে। অথচ নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা দক্ষ্যতা যোগ্যতাকে প্রকাশ করে প্রতিযোগিতাপূর্ন পরিবেশে সফলতা অর্জনে ঈর্ষা বা হিংসা ধাবিত করে।

ঈর্ষা বা হিংসা তুলনামূলক মনোভাব তৈরি করে। মানে অন্যের যে যোগ্যতা, দক্ষ্যতা বা অর্জন নিয়ে আপনি ঈর্ষান্বিত সেটা আপনার মধ্যে আছে কিনা তা বোঝা যায়। এখন এই যোগ্যতা, দক্ষতা প্রকাশ করে নিজের অর্জন বাড়ানোর প্রচেষ্টা করুন। নিজের অগ্রাধিকারভিত্তিক উদ্দেশ লক্ষ্য অভিপ্রায় অর্জনের পথ সুগম হবে। ফলে অপরের প্রতি ঈর্ষা, হিংসা বা বিদ্বেষ দূর হয়ে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে।

এটা সত্যি, অন্যের নেতিবাচক কোনো আচরণ নিজের মধ্যে খুঁজতে যাওয়া অবশ্যই ঠিক হবে না। সমৃদ্ধি, কল্যাণের জন্য সবসময়ই কাঙ্ক্ষিত বা গ্রহণযোগ্য যোগ্যতা চর্চাই হবে উদ্দেশ্য। নিজের অন্তর্নিহিত অভিপ্রায় ইচ্ছাকে চিনে নিয়ে তাদের প্রাধান্য দিন। তুলনা করতে গিয়ে নিজের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা আনন্দ বিনষ্ট না করাই ভালো।

প্রত্যেক মানুষ যেমন আলাদা তেমনই প্রত্যেকের যোগ্যতা, প্রবণতা ও দক্ষতা, সুযোগ সুবিধাও ভিন্ন। মনে রাখবেন সফল ব্যক্তির মতো হতে চাওয়া ভালো। তবে ঈর্ষা, হিংসা বা বিদ্বেষকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দিয়ে নিজের চিন্তা চেতনাকে বিষিয়ে তোলা মস্ত বড় ভুল। পরিমিত ঈর্ষা বা হিংসাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে  উৎকৃষ্ট রূপে প্রকাশ করুন।

ইংল্যান্ড এর ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা যায়, ইথিওপিয়ার কিছু গ্রামে কৃষকেরা ঈর্ষনীয় ফসল দেখে হিংসার বসবর্তী হয়ে অন্যের ফসল বিনষ্ট করে দিত। ফলশ্রুতিতে ফসল বিনষ্ট হওয়ার ভয়ে কৃষিকাজে নতুন পদ্ধতি কৌশল ব্যবহারে তারা অনুৎসাহী হয়ে পড়ে। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডের টিলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ২০১১ সালে স্কুলের বাচ্চাদের উপর এক গবেষণা চালায়। যেখানে পিছিয়ে পরা বাচ্চাদের মেধাবী বাচ্চাদের মতো পরিশ্রম করতে উৎসাহ দেওয়া হলে তাদের পরীক্ষার ফলাফলের অনেক উন্নতি হয়।

ঈর্ষা বা হিংসার উদ্রেক হয় সমকক্ষ একটি শ্রেণির মধ্যে। কাজেই নিজেকে সমকক্ষ কারো সঙ্গে তুলনার চেয়ে কয়েক ধাপ আগানো ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করুন। শেষ কথা হলো, অন্যের সাফল্যে নিজের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত ঈর্ষাকে প্রশয় দিয়ে নিজের সফলতা অর্জনে এগিয়ে যান।

Link copied!