ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর সালেহা ভেবেছিলেন সংসার সামলানোর জন্য এবার তার একজন সঙ্গী এলো। কিন্তু বিয়ে হয়ে যাওয়ার সাত মাস পার হয়ে গেলেও ছেলের বউ যখন রান্নাঘরে পা দিল না তখন চিন্তায় পড়ে গেলেন সালেহা। কী করে বললে যে বউমা সংসারের খানিকটা দায়িত্ব নেবে ভেবেই পান না তিনি। বউমাকে মুখ ফুটে কিছু বলতেও সঙ্কোচ লাগে তার। কারণ কাজ করার কথা বললে সে যদি আবার কিছু মনে করে বসে। সালেহার স্বামী রোজই বলেন বউমাকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে দিতে। কিন্তু সালেহা ভাবেন, সেও তো একদিন নতুন বউ হয়ে এই সংসারে এসেছিল, তখন তো তাকে কারো কিছু বলে দিতে হয়নি। সে তো নিজের থেকেই সংসারের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিল। তাহলে তাকে কেন বউমাকে হাতে ধরে সব দায়িত্ব দিতে হবে?
রিমা বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। বাবার বাড়িতে কোনোদিন কোনো কাজ করতে হয়নি। প্রেম করার সময় শাহেদকে বলেই নিয়েছিল, সে সংসারের কোনো কাজই পারে না। তাছাড়া বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদে চাকরিও করে। তারপরও কেন যে ওর শাশুড়ি আশা করেন ছেলের বউ ঘরের কাজও করবে, তা বুঝতে পারে না রিমা। ঘরের কাজের জন্য কাজের লোক রাখলেই তো হয়। কিন্তু রিমার শাশুড়ির একটাই কথা, কাজের লোকের রান্না খাওয়া কখনোই সম্ভব না।
বিয়ের পর সব শাশুড়িই আশা করেন বউমা এসে সংসারের দায়িত্ব নেবে। কিন্তু অনেকসময় তা হয়ে ওঠে না। ফলে শুরু হয়ে যায় সাংসারিক অশান্তি। চলুন দেখে নেওয়া যাক বউমা হিসেবে আপনি কী করলে সংসারের শান্তি বজায় থাকবে এবং আপনার দায়িত্ব রক্ষাও হবে। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান জোবেদা খাতুন।
১. বাবার বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকে, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই কিছুটা হলেও দায়িত্ব বেড়ে যাওয়া।
২. শ্বশুরবাড়িকে নিজের বাড়ি ভাবতে শিখুন।
৩. বাবার বাড়িতে মাকে যেভাবে সাহায্য করতেন, শাশুড়ি মাকেও সেভাবে সাহায্য করুন।
৪. স্বামীর পরিবারকে আপন করতে পারলে আপনার স্বামীও খুশি হবেন। তাই শাশুড়িসহ সবাইকে আপন করার চেষ্টা করুন।
৫. সবাই সব কিছু পারে না। কিন্তু সাহায্য করার ইচ্ছেটাই বড়। আপনি যতটুকু পারেন শাশুড়ি মাকে সেটুকু সাহায্যই করুন।
৬. শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে কাজ শিখে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
৭. শাশুড়ি মা কিছু বললেই রেগে যাবেন না। আপনার মা যখন আপনাকে বকা দিতেন তখন ব্যাপারটা যেভাবে নিতেন, এখনও সেভাবেই নিন।
৮. শাশুড়ির সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশার চেষ্টা করে তার পছন্দ-অপছন্দ জেনে নিন।
৯. শাশুড়ি মায়ের নামে স্বামীর কাছে নালিশ করবেন না। কারণ সবসময় মনে রাখবেন তিনি আপনার স্বামীর মা। আপনি যেমন আপনার মায়ের নামে নেতিবাচক কিছু শুনতে চাইবেন না, আপনার স্বামীরও নিশ্চয় তার মায়ের বদনাম শুনতে ভালো লাগবে না।
১০. সবার কাছে শাশুড়ির নিন্দা করবেন না। কারণ শাশুড়ি আপনার পরিবারেরই অংশ। অন্যদের কাছে শাশুড়ির নিন্দা করলে আপনার পরিবারকেই সবার কাছে ছোট করা হবে।