ঘরে ঘরে চলছে পূজার উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গণেশ পূজা। গণেশের আগমনে পুরো বাড়ি সাজানো হয় নানা রঙে। ফুলের মালা, রঙিন আলপনায় সাজানো হয় বাড়ির আঙিনা। ধূপকাঠির গন্ধে ঘর ভরে যায়। পুণ্যতা লাভে করা হয় গণেশ পূজা।
এই বছর গণেশ চতুর্থী পড়েছে ১০ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার। ৯ সেপ্টেম্বর রাত ৩টা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১টা পর্যন্ত থাকবে চতুর্থী তিথি।
প্রায় ১০ দিন ধরে চলে গণেশ চতুর্থী উৎসব। ১১তম দিনে গণেশ মূর্তির নিরঞ্জন করা হয়। পূজার এই শেষ দিনকে বলা হয় ‘অনন্ত’।
হিন্দুরা বিশ্বাস করে, নিষ্ঠা করে সব নিয়মকানুন মেনে সিদ্ধিদাতার পূজা করলে সুখ-শান্তি বজায় থাকে, সমৃদ্ধি হয় এবং সব বাধা দূর হয়।
এ উপলক্ষে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে গণেশ পূজার আরাধনা। বাড়ির ঠাকুর ঘরকে সাজানো হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি ঘরও ফুল আর রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। বাড়িতে পূজার আমেজে যে আয়োজন হয় তা জানাব এই আয়োজনে_
- ঘরের দরজা সুন্দর করে সাজানো হয়। দ্বারঘটের চারপাশে হলুদ গাঁদার মালা জড়িয়ে রাখা হয়। ঘরে ঢোকার মূল দরজায় লম্বা করে গাঁদা ফুলের মালা ঝুলিয়ে রাখা হয়। অতিথিদের আগমনে স্বাগত জানাতে এই আয়োজন করা হয়।
- লাল ও হলুদ রংগণেশ ঠাকুরের খুব প্রিয়। ঘর সাজাতে এই দুটো রংকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। লাল ও হলুদ রঙের ওড়না দিয়ে পুরো ঘর সাজিয়ে নিতেপারেন। কিংবা ওড়নায় ছোট ছোট করে কুঁচি করে ঝুলিয়ে দিতে পারেন জানালায়।
- ঘরের সামনে বা সিঁড়িতে নানা রঙের আলপনা এঁকে নেন। আলপনাতেও লাল ও হলুদ রঙের ব্যবহার বেশি থাকে।
- প্রতিটি ঘরের ফুলদানিতে থাকে রঙিন ফুল। লাল এবং হলুদ রঙের ফুলকে প্রাধান্য দিলেও অন্য রঙের ফুল শোভা পায়।
- ঘরের উঠানে বা পূজার ঘরে একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজিয়ে নেন। আলপনার উপরেও একটি পাত্রে গোলাপ পাপড়ির পানি রেখে দেন।
- লাল, হলুদ রঙের কাগজ কেটে রিং বানিয়ে ঘরে টানিয়ে নেন অনেকে। রিং দিয়ে কাগজের চেনও বানিয়ে নেন। ঘরের এক দেয়াল থেকে আরেক দেয়াল পর্যন্ত টেনে পুরো বাড়িতে সাজিয়ে নেন এই উৎসব।
- বাড়িতে গণেশ মূর্তি স্থাপনের আগে সারা বাড়ি পরিষ্কার করা হয়। স্নান সেরে মন্ত্রের মাধ্যমে মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর শুরু হয় পূজা। ঋক বেদ বা গণেশ সুক্তায় পাবেন প্রাণ প্রতিষ্ঠার মন্ত্র। প্রাণ প্রতিষ্ঠার পরই ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু হয় আরতি।
- ষোড়শপচারে গণেশের আরাধনা হয়। গণেশ বন্দনার ১৬টি রীতির নামই ষোড়শপচার। এরপর ২১টি দূর্বা ঘাস, ২১টি মোদক ( লাড্ডু বা করঞ্জিও চলবে) ও লাল ফুল গণেশের সামনে সাজিয়ে রাখা হয়। মূর্তির মাথায় লাল চন্দনের টিকা দেওয়া হয়। এরপর গণেশ মূর্তির সামনে নারকেল ভেঙে অশুভ শক্তিকে দূর করা হয়। এরপরু গণেশের ১০৮ নাম জপ করা হয়।
- মূর্তির সামনে সবাই জন্য প্রার্থনা করে। পরিবারের সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধির কামনা করে।
- গণেশের বন্দনা—“ বন্দ দেব গজানন বিঘ্ন বিনাশন। নমঃ প্রভু মহাকায় মহেশ নন্দন। সর্ববিঘ্ন নাশ হয় তোমার শরণে। অগ্রেতে তোমার পূজা করিনু যতনে।। নমো নমো লম্বোদর নমঃ গণপতি। মাতা যার আদ্যাশক্তি দেবী ভগবতী। সর্বদেব গণনায় অগ্রে যার স্থান। বিধি-বিষ্ণু মহেশ্বর আর দেবগণ। ত্রিনয়নী তারার বন্দিনু শ্রীচরণ। বেদমাতা সরস্বতীর লইনু শরণ।