সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে অবস্থান নিয়ে ফলাফল প্রকাশের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের ফলপ্রত্যাশীরা। চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থানের কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে পিএসসির গেটে তালা মেরে দিয়েছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা।
সোমবার সকালে পিএসসির বাইরে মাইক নিয়ে ফলের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরির ফলাফল প্রকাশ আজই করার দাবি তুলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা বলেন, ফলাফল নিয়ে পিএসসি টালবাহানা শুরু করছে। আজই ফলাফল চান।
এ বিষয় নিয়ে পিএসসির এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থানের কারণে আনসার সদস্যরা গেটে তালা দিয়েছেন। ভেতরে ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা হচ্ছে। বাইরে মাইকে স্লোগান হচ্ছে। পরীক্ষা যাঁরা দিচ্ছেন, তারাও অসুবিধায় পড়েছেন। ফলাফল দিতে দেরি কেন আর কবে হবে, তা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ফলাফল সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমতি পেলেই দেওয়া হবে।
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদের ফলাফলের দাবিতে এর আগেও কয়েক দফা আন্দোলন করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। পিএসসির সামনে তাঁরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।
পিএসসি থেকে জানা গেছে, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের ৪৪ ক্যাটাগরির পদে ৭ হাজারের বেশি প্রার্থী ভাইভা দিয়েছেন। বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মনোটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলোর শিক্ষকসংকট নিরসনে ‘জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক)’ পদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
ফলাফলপ্রত্যাশীরা বলছেন, মৌখিক পরীক্ষায় মোট ৭ হাজার ৪০০ প্রার্থী ৩ হাজার ৮৭ পদের বিপরীতে অংশ নেন। মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৩ ও ১৫তম গ্রেডভুক্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর আদালতে একটি অবৈধ রিট পিটিশন করেন, যেখানে তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবে ১০ম গ্রেড জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দাবি করেন, যা ২০২০ সালের প্রজ্ঞাপনের ক্যাডার, নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হাইকোর্ট মামলায় রুল ইস্যু না করে বাদীদের করা আবেদন (অ্যানেক্স-আই) ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড ও নন-গেজেটেড (কর্মকর্তা-কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ মোতাবেক ১৩ ও ১৫তম গ্রেডভুক্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর (সপ/টিআর) পদ থেকে ১০ম গ্রেডভুক্ত জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/নন-টেক) পদে পদোন্নতির সুযোগ নেই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদনটি নিষ্পত্তি করেন।
তা সত্ত্বেও ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে পুনরায় রিট পিটিশন করলে মহামান্য হাইকোর্ট নিয়োগপ্রক্রিয়ার ওপর ছয় মাসের স্থগিত আদেশ দেন। ফলে শিক্ষক নিয়োগের সব ধাপ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও অবৈধ মামলার কারণে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিল।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় রিটের বিপক্ষে আপিল করলে মহামান্য আদালত শুনানির দিন ধার্য করেন এবং স্থগিতাদেশের ওপর আট সপ্তাহের জন্য অর্ডারটি স্থগিত করেন। যার ফলে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে আইনি আর কোনো বাধা থাকে না।
ভ্যাকেট সময়ের চার সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেলেও ফলাফল প্রকাশের সময় দীর্ঘায়িত করার বিরুদ্ধে এবং অবিলম্বে ফলাফল প্রকাশের দাবিতে ‘জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক) পদের ফলপ্রত্যাশী’রা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এসেছেন। এবার পিএসসির প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা।