আমাদের শরীরে মাঝে মধ্যেই নানা ধরনের ব্যথাজনিত রোগ এবং রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। যা শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি মানসিক পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ফিজিওথেরাপি অন্যতম একটি চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপি কী? এই চিকিৎসার পদ্ধতিটাই কেমন। এ নিয়ে সংশয় আছে অনেকের।
ফিজিওথেরাপি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সঞ্জিত চক্রবর্তী। আলাপচারিতায় বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার বিষয়ে দিয়েছেন নানান তথ্য। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সংবাদ প্রকাশের প্রতিবেদক বিজন কুমার।
সংবাদ প্রকাশ : ফিজিওথেরাপি কী?
ডা. এস চক্রবর্তী : ফিজিওথেরাপি হল এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির রোগ শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের মাধ্যমে নিরাময় করা হয়।
আমরা ছোটবেলায় শুনেছি, সুস্থ থাকতে হলে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা জরুরি। কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য ঠিক কতটুকু বা কী মাত্রায় শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের প্রয়োজন, তা আমাদের অজানা। সেই ব্যায়ামকে যখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের আওতায় একটি নিয়মের মধ্যে আনা হলো, তখন তাকে বলা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি।
সংবাদ প্রকাশ : একজন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন নিজে থেকেই ব্যায়াম করেন, তাহলে কি ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন আছে?
ডা. এস চক্রবর্তী : ধরুন একজন ব্যক্তিকে তার অসুস্থতার জন্য ৬ ঘণ্টা পর-পর অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে বলা হয়েছে। এখন সেই ব্যক্তি চিন্তা করছেন, তিন বেলার ওষুধ একবারে খেয়ে নিলেই তো হয়। সময় বাঁচবে, অসুখও সারবে। কিন্তু না, এতে করে তার সুস্থতা আসবে না। বরং তা শরীরের সমস্যা বাড়বে।
ফিজিওথেরাপি ঠিক তেমনই, নির্ধারিত সময় এবং মাত্রা অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে তা গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ প্রকাশ : কোন কোন রোগে একজন রোগী ফিজিওথেরাপি গ্রহণ করবেন?
ডা. এস চক্রবর্তী : মেকানিক্যাল যত রোগ রয়েছে, যেমন: কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার (জমাট কাঁধ/কাঁধের জড়তা), বাত ব্যথা, টেনিস এলবো (কনুই ব্যথা) ইত্যাদি। পাশাপাশি যেকোনো অপারেশনের পরে যে পুনর্বাসন, তার জন্য ফিজিওথেরাপি লাগবেই।
একজন রোগীর অপারেশনের পর যদি ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়, তবে সেই রোগী শতভাগ সুস্থ হবেই। সেটা গাইনি, কার্ডিয়াক, অর্থোপেডিক, নিউরোসার্জারি যেকোনো অপারেশন হোক না কেন। সর্বোপরি বলা যায়, প্রতিটি মানুষের জন্য ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত জরুরি।
সংবাদ প্রকাশ : কোন কোন রোগের জন্য ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন নেই?
ডা. এস চক্রবর্তী : ফিজিওথেরাপি ব্যায়ামের মাধ্যমে দেওয়া হয়। ব্যথা জনিত রোগের জন্য ফিজিওথেরাপি অন্যতম। সব ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন নেই। যেমন; একজন ব্যক্তির যদি হার্টে ব্যথা কিংবা টিউমারের কারণে ব্যথা হয়। তবে সেই রোগে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন নেই।
তবে হ্যাঁ, এসব রোগের চিকিৎসার পর ফিজিওথেরাপি সাপোর্ট হিসেবে কাজ করবে। মনে রাখতে হবে, সকল ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি নয়। কিন্তু ব্যথার জন্য ৯৯ শতাংশ ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ।
বলা হয়ে থাকে, অপারেশন বা ওষুধ একজন মানুষের জীবন রক্ষা করে। আর ফিজিওথেরাপি সেই মানুষের জীবনটাকে সচল রাখে।
সংবাদ প্রকাশ : বাংলাদেশে কত শতাংশ রোগীর ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন?
ডা. এস চক্রবর্তী : এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে এককভাবে এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণা হয়নি। তাই সঠিকভাবে বলা যায় না, যে কতজন রোগীর আসলে ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশে যত রোগী আছে। তারমধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ রোগীর ফিজিওথেরাপি লাগবেই।
সংবাদ প্রকাশ : ফিজিওথেরাপির চিকিৎসা স্থায়িত্ব কতটুকু?
ডা. এস চক্রবর্তী : একজন মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তার শরীরচর্চা। ওষুধের চেয়ে বেশি শক্তিশালী দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রাকৃতিক। যা শরীরচর্চার আরেকটি রূপ। ফিজিওথেরাপি দিয়ে নিজের সমস্যা একবার কন্ট্রোল করা গেলে এবং সারা জীবন নিজে নিজে ফিজিওথেরাপি করলে আর পয়সা লাগবে না।
সংবাদ প্রকাশ : বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সংকট রয়েছে কি না?
ডা. এস চক্রবর্তী : আমাদের দেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার অনেক সংকট রয়েছে। যদি বলি, মানসম্পন্ন চিকিৎসক মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন রয়েছে। যা এই চিকিৎসা চাহিদার চেয়ে অতি নগণ্য। এটা শতাংশে বলা খুবই কঠিন।
সংবাদ প্রকাশ : ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী?
ডা. এস চক্রবর্তী : আমাদের তরুণ প্রজন্ম রয়েছে। প্রতি বছর লাখ লাখ ছেলেমেয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করছে। তাদের এই বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। তারা এই চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা করলে মানসম্পন্ন হবে।
তাছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি বিষয়ে পড়ানো গেলে একদিকে যেমন এই দেশে ফিজিওথেরাপির সংকট মোচনে করা যাবে, একইভাবে বেকারত্বের হারও কিন্তু কমে আসবে।