• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারতের যেকোনো ভাষা থেকে বাংলা অনেক সমৃদ্ধ : আবুল কাসেম ফজলুল হক


খাদিজা নিপা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩, ০৪:১১ পিএম
ভারতের যেকোনো ভাষা থেকে বাংলা অনেক সমৃদ্ধ : আবুল কাসেম ফজলুল হক

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক একাধারে প্রাবন্ধিক, গবেষক, ঐতিহাসিক, অনুবাদক, সমাজ বিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক। নিরপেক্ষ রাজনৈতিক চিন্তা ও তত্ত্বের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত তিনি। তাঁর রচনা স্বদেশ ভাবনা ও রাজনৈতিক চিন্তায় ঋদ্ধ। প্রগতিপ্রয়াসী মন নিয়ে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে মত প্রকাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন অধ্যাপক এবং বাংলা বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮১ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এই বিশিষ্টজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খাদিজা নিপা


সংবাদ প্রকাশ : ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষার জন্য আন্দোলন কেন জরুরি হয়ে পড়েছিল?
আবুল কাসেম ফজলুল হক : পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই—এই দাবি নিয়ে কী কারণে এত বড় আন্দোলন হয়েছিল, এইটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রথম কথা হলো, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যে পাকিস্তান গঠিত হলো, এইটার সাথে বাংলার মুসলিম লেখকেরা এক হতে পারেননি। এই দ্বিজাতিতত্ত্ব ভারতবর্ষের সে সময়ের বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত ছিল না। ভারতবর্ষ কোনো এক জাতির রাষ্ট্র না। এখানে বাঙালি, পাঞ্জাবি, মহারাষ্ট্র—এমন বহু জাতির রাষ্ট্র হলো ভারত।

সংবাদ প্রকাশ : তাহলে বাস্তবতাটা কেমন ছিল?
আবুল কাসেম ফজলুল হক : সম্রাট আকবর যে ১৫টা সভা করে প্রশাসনিক কাজকর্ম চালাচ্ছিলেন, এই ১৫টা সভার ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ করাই যদি অনিবার্য ছিল, তাহলে ভারতে ১৫-১৬ বা ১৭টা জাতিরাষ্ট্র হতে পারত। কিন্তু সেটা না করে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ করা হলো। সেভাবে পাকিস্তান করা হলো, বাংলা ভাগ করে পাঞ্জাব ভাগ করে এবং সর্বোপরি ভারত ভাগ করে যেটা করা হলো, সেটা মোটেও যুক্তিসংগত হয়নি। এটা দিয়ে ভারতের বা পাকিস্তানের কোনো জাতি সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।

সংবাদ প্রকাশ : এখানে সাংস্কৃতিক পার্থক্য কতখানি?
আবুল কাসেম ফজলুল হক : আমরা পূর্ব বাংলার বাঙালি। আমাদের ভাষা-ইতিহাস-ঐতিহ্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভিন্ন। কাজেই আমাদের কাজকর্ম অন্তত বাংলা ভাষায় করতে দিতে হতো। এ রকম একটা উপলব্ধি থেকে পাকিস্তান সৃষ্টি, ভারত ভাগ, পাঞ্জাব ভাগ, বাংলা ভাগ— এগুলো ঠিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মত হয়নি। পাকিস্তান সৃষ্টির গোড়া থেকেই এ রকম ভিন্ন মত লেখক-শিল্পী-রাজনীতিবিদের মধ্যে ছিল। এটা ছিল তাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যারা বাঙালি স্বাতন্ত্র্য নিয়ে এগোচ্ছিল তাদের কাছে এটা অসাধারণ মূল্যবান ছিল। আর যত দিন গেছে পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা বেড়েছে।

সংবাদ প্রকাশ : সেই চেতনার জায়গাটি যদি একটু বিস্তারিত বলতেন…
আবুল কাসেম ফজলুল হক : পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই এই যে মনি অর্ডার ফরম, সেগুলো ইংরেজিতে, পাশাপাশি কোথাও কোথাও উর্দুতে লেখা হয়েছে। যেমন : ইনভেলপ, পোস্টকার্ড এইগুলো উর্দুতে লেখা হচ্ছিল। আবার কোথাও কোথাও ইংরেজি আবার উর্দুতে লেখা হয়। মনি অর্ডার ফরম তখন প্রচলন বেশি ছিল। এটি বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেল বাংলা বাদ দিয়ে উর্দুতে লেখা হচ্ছে। তাতে করে ছাত্র থেকে আরম্ভ করে এখানে যারা শিক্ষিত লোক ছিল, তাদের মনে ধারণা হলো, যদি রাষ্ট্রভাষা উর্দু হয় তাহলে শিক্ষাব্যবস্থার ভেতরে উর্দু ভাষা চালু হবে। 
ভারতের যেকোনো ভাষা থেকে বাংলা ভাষা অনেক সমৃদ্ধ এবং এশিয়ার যেকোনো ভাষা থেকেও উৎকৃষ্ট। তো, আমরা আমাদের ভাষা দিয়ে শিক্ষা-দীক্ষা না চালাতে পারলে, অফিস আদালত না চালাতে পারলে, শিক্ষা-দীক্ষায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আমরা পিছিয়ে পরব। যত দিন যাবে আমাদের অবস্থা খারাপ হতে থাকবে। এই কারণই রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন আরম্ভ হয়। তারপর যত দিন গেছে এই রাষ্ট্রভাষা চেতনা, বাংলা ভাষার চেতনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।

কথাপ্রকাশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!