দুর্বল জাপানি মুদ্রা ইয়ান আর ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়া দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে জাপানকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জাপানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাড়িয়ে দিয়েছে সুদের হার। শুধু তাই নয়, রাজধানী টোকিওর বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার।
তবে এতকিছুর পরেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। বরং দারিদ্রের চাপে নাজেহাল অবস্থা দেশটির মধ্যবিত্তদের। বিগত করোনা মহামারির সময় থেকেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জাপানে অল্প বয়সী বা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীরা ঝুঁকে পড়েছেন অর্থের বিনিময়ে যৌন কাজে।
বিশেষ করে টোকিওতে তরুণী এবং নারীরা জীবন যাপনের ব্যয় নির্বাহের প্রয়োজনেই যৌনকর্মীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। ফলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা টোকিয়ার আগের চিত্রের বদল ঘটেছে। মূল আকর্ষণ হয়ে পড়ে ‘সেক্স ট্যুরিজম’ বা যৌন পর্যটন।
জাপানের যৌন পর্যটনে জড়িয়ে পড়া অল্প বয়সী বিশেষ করে ১৯-২০ বছরের তরুণীদের টানে ছুটে আসছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুরুষরা। এদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন চীনা পুরুষরা। তারা জাপানি তরুণীদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন।
জাপানের যৌন পর্যটনের তথ্য উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য স্টার’ এর প্রতিবেদনে। সপ্তাহ দুয়েক আগে জাপানের ‘লিয়াজোঁ কাউন্সিল প্রোটেক্টিং ইয়ুথ’-এর সেক্রেটারি জেনারেল ইয়োশিহিদ তানাকা সংবাদমাধ্যম ‘এশিয়া’কে বলেছেন, “জাপান একটি দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে।”
সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনা মহামারী সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর থেকেই টোকিওতে নানা দেশের পুরুষদের আনাগোনা বেড়েছে। অল্প বয়সী যৌনকর্মী আর যৌনশিল্পের জন্যই তারা টোকিওতে ঝুঁকেছেন।
ইয়োশিহিদ তানাকা বলছেন, টোকিওর অন্যতম দর্শনীয় স্থান ওকুবো পার্ক ও সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর ভিড় হয়। যেখানে যৌনকর্মীরা গিয়ে তাদের ক্লায়েটের আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। তবে যৌন পর্যটন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে কিছু অপরাধের ঘটনাও ঘটছে।
যৌন হেনস্তার শিকার হওয়া নারীদের সহায়তা প্রদানকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘প্যাপস’-এর সদস্য কাজুনা কানাজিরি বলছেন, শুধু ওকুবো পার্কের পাশেই নয়, অন্যসব পার্কেও যৌনকর্ম চলে।
জাপানের প্রধান বিরোধীদল ‘কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব জাপান’-এর সদস্য তথা আইনসভার সদস্য কাজুনোরি ইয়ামানোই-সহ আরও অনেকেই যৌনকর্ম সংক্রান্ত নির্দিষ্ট নিয়মাবলি তৈরির পক্ষে কথা বলেছেন।
কাজুনোরি বলছেন, “বাস্তব বিষয় হচ্ছে, জাপান এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে, যেখানে বিদেশি পুরুষরা সহজেই অল্পবয়সি নারীদের থেকে যৌনসেবা পেতে পারে।” তবে তিনি এটাও বলেন, এটি শুধু ঘরোয়া সমস্যাই নয়, এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে জাপানি নারীদের বিষয়ে ধারণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।