পোপ ফ্রান্সিসকে শেষবিদায় জানাতে তার শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের অনেক নেতা ও রাজপরিবারের সদস্যরা। সবার পরনে দেখা গেছে কালো পোশাক। শোকাহত হৃদয়ে তারা ক্যাথলিক ধর্মগুরুকে বিদায় জানাচ্ছেন।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রায় ১৩০টি বিদেশি প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে ৫০ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং ১২ জন রাজা-রানী রয়েছেন। ফক্স নিউজের খবরে বলা হয়েছে, বিশিষ্ট বিশ্বনেতাদের মধ্যে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে হাজির হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পোপের শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়াসহ আরো রয়েছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ; ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি; ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও প্রেসিডেন্ট সেরজিও মাত্তারেলা; জার্মানি চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ও প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ওয়াল্টার স্টেইনমার; আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলে; ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা; ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র; তুরস্কের পার্লামেন্ট স্পিকার নুমান কুরতুলমুশ।
মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু; পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা; আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিখেল মার্টিন; ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোরান মিলানোভিচ; নরওয়ের ক্রাউন প্রিন্স হাকোন ও ক্রাউন প্রিন্সেস মেট্টে-মারিত; স্পেনের রাজা ফিলিপে ও রানি লেতিসিয়া; বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ ও রানি ম্যাথিল্ড; লুক্সেমবার্গের গ্র্যান্ড ডিউক হেনরি ও গ্র্যান্ড ডাচেস মারিয়া তেরেসা; সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ ও রানি সিলভিয়া; জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ ও রানি রানিয়া; মোনাকোর প্রিন্স আলবার্ট ও প্রিন্সেস শার্লিন; অ্যান্ডোরার আর্চবিশপ জোয়ান এনরিক ভিভেস পোপের শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছেন।
ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরুর মহাবিদায়লগ্নে আরো উপস্থিত হয়েছেন, আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স খালিদ বিন মুহাম্মদ আল নাহিয়ান; মরক্কোর ক্রাউন প্রিন্স মুলায় হাসান; সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার-সুটার; স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নাটাসা পির্ক মুসার; স্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট পিটার পেল্লেগ্রিনি; সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বায়ো; তিমোর-লেস্তের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা; টোগোর প্রেসিডেন্ট ফাউরে গনাসিংবে; পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রো; রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্সেল চিওলাকু; সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুরো ম্যাকুট; কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি; সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং; মালয়েশিয়ার আইনমন্ত্রী আজালিনা ও ইওন; জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকাশি ইওয়ায়াসহ আরো অনেকে।
তবে নির্বাচনী প্রচারের কারণে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি; আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও ভ্যাটিকানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু; যুক্তরাষ্ট্র সফরের কারণে প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট সান্তিয়াগো পেনা; কংগ্রেস ভ্রমণের অনুমতি না দেওয়ায় পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
শুধু বিশ্বনেতারা নন, অন্যান্য ধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি যেমন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস; ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন দেয়ার লায়েন; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস উপস্থিত হয়েছেন।
১৪০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান আধ্যাত্মিক নেতা পোপের শেষকৃত্যে শোকাহত মানুষের ঢল নেমেছে। ইতালিযর পুলিশ জানিয়েছে, পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের জন্য সেন্ট পিটার্স স্কয়ার এবং আশেপাশের রাস্তায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা গির্জার সামনের চত্বরে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন কার্ডিনাল কলেজের ডিন কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে।
উপাসনা অনুষ্ঠানের পর কফিনটি সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় এবং তারপর ফ্রান্সিসের অনুরোধে সমাহিত করার জন্য সান্তা মারিয়া ম্যাগিওরের ব্যাসিলিকায় নিয়ে যাওয়া হবে।
২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ভ্যাটিকানের ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস। গত সোমবার (২১ এপ্রিল) ভ্যাটিক্যানে নিজ বাসভবন কাসা সান্টা মার্টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত ৭০০ বছরের ইতিহাসে তিনি ছিলেন প্রথম অ-ইউরোপীয় পোপ। তার চিরপ্রস্থানে এখন একজন নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।