আলোচনা-সমালোচনা মুখোমুখি পড়তে হোয়াইট হাউসে আসতে হয় নি ট্রাম্পকে। এর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ও বর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের তালিকায় ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশেষ করে তিনি আলোচিত ছিলেন একজন ব্যবসায়ী ও সেলেব্রিটি হিসেবে। তারপর তিনি আসেন হোয়াইট হাউসে।
ডোনাল্ড জন ট্রাম্প সিনিয়র বেড়ে উঠেছেন নিউইয়র্কের কুইন্সে। তিনি ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন এই শহরেই জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তার পিতামহ জার্মানীর অভিবাসী ছিলেন। তার দাদা ফ্রেডেরিক ট্রাম্পের ১৮৮৫ সালের আগে পর্যন্ত জার্মানিতে নিজের "ক্লোনডিক গোল্ড রাশ" নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল। পরে তিনি ১৮৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হয়ে আসেন।
ট্রাম্পের মা ম্যারী অ্যানী একজন গৃহিণী এবং তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্প (১৯০৫-১৯৯৯) ছিলেন একজন রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী। তারা পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তবে তার আরেকটি পরিচয় হলো তিনি অর্ধেক স্কটিশ। কারণ তার মা মেরি ম্যাকলয়েডের জন্ম স্কটল্যান্ডে।
কিউ-ফরেস্ট স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করলেও স্কুলে দুষ্টুমি করার কারণে ১৩ বছর বয়সে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সামরিক একাডেমিতে। ট্রাম্প তার অষ্টম শ্রেণী এবং হাইস্কুল জীবন নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমিতেই শেষ করেন। ট্রাম্প পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হোয়ারটন স্কুলে পড়ার সময় বাবার ‘এলিজাবেথ ট্রাম্প এন্ড সান’ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তার বাবার প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন।
বাবার ব্যবসার হাল ধরার পর ব্যবসায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন ট্রাম্প। একে একে গড়ে তোলেন ট্রাম্প প্যালেস, ট্রাম্প ওয়ার্ল্ড টাওয়ার, ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলসহ আরো কিছু ভবন। মুম্বাই, ইস্তাম্বুল ও ফিলিপিনেও আছে ট্রাম্প টাওয়ার। বেশ কিছু হোটেল ও ক্যাসিনোও তৈরি করেন সে সময়ে। যদিও পরে তার ওই ব্যবসা দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়।
একই সঙ্গে বিনোদন জগতেও পা রাখেন ট্রাম্প। ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএ এবং মিস টিন ইউএস এ সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন তিনি। এমনকি ২০০৩ সালে এনবিসি টেলিভিশনে দ্য অ্যাপ্রেনটিস নামের একটি রিয়েলিটি শো চালু করেন। যা ব্যাপক দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এছাড়া বেশ কিছু টিভি প্রোগ্রামের উপস্থাপকও হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৮৭ সালে একবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনের আগ্রহ দেখালেও ২০১৫ সালে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়বেন। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে আবার একটি শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে - এই স্লোগান নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েন ট্রাম্প।
তবে সেমসয় তাকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ তার বক্তব্যে নারীদের সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করতে শোনা গেছে। এসময় তার দলেরও অনেকে মন্তব্য করেছেন যে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন।
নির্বাচনের পরে ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট রাজনীতিতে যার কোনো অভিজ্ঞতা ছিলো না। আর এ সময় পড়তে হয়েছিল নানান সমালোচনায়। বেশ কয়েকজন নারী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। কেউ কেউ তাকে কমেডিয়ান বলেও উল্লেখ করেন।
তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, তার স্টাইল বা তার চুলের রঙের কারণেও নানা সময় সমালোচনার কারণ হন ট্রাম্প। অন্যদিকে গর্ভপাত প্রশ্নে যে আইনি নিশ্চয়তা আমেরিকার নারীরা অর্ধশতক ধরে ভোগ করেছেন, ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক সিদ্ধান্তে তা বাতিল করেন।
ট্রাম্প গর্ব করে বলেছিলেন, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ শুধু তাঁর জন্যই সম্ভব হয়েছে। কারণ তিনি সুপ্রিম কোর্টে এমন তিনজন রক্ষণশীল বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়েছেন, যাঁরা গর্ভপাতবিরোধী। তবে তিনি এটা বুঝতে পারেন নি দেশের অধিকাংশ নারী ও পুরুষ গর্ভপাতের অধিকার সংরক্ষণের পক্ষে। ফলে এটা নিয়েও বিপাকে পড়তে হয়েছে ট্রাম্পকে।
তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম ২০১৭ সালে বিদেশ সফরে সৌদি আরবে যান। ট্রাম্প বিদেশি সংঘাত থেকে নিজ দেশকে মুক্ত রাখার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতির সমর্থক ছিলেন।
ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী ইভানার ঘরে ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভাঙ্কা ও এরিক- তিন সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী মারলা ম্যাপলসের ঘরে তার একটি মেয়ে রয়েছে, নাম টিফানি। ২০০৫ সালে ট্রাম্প তৃতীয় বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম মেলানিয়া। ব্যারন নামে এই দম্পতির একটি ছেলে আছে।