দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বের বহুল আলোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিশ্ববাসী এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামটি শোনার জন্য। এরই মধ্যে সমান আলোচনায় এসেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
একদিনে সবচেয়ে বেশি অনুদান সংগ্রহ করা, তার বয়স, নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ এশীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়া, গর্ভপাত বিষয়ে তার অবস্থান, অভিবাসনসংক্রান্ত ইসুতে বক্তব্য এরই মধ্যে তাকে করে তুলেছে আলোচিত ও বিতর্কিত।
গত সাড়ে তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কমলা হ্যারিস। ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মগ্রহণকারী কমালা হ্যারিসের বয়স ৫৯। তার আলোচনায় আসার একটা কারণ হতে পারে, জো বাইডেনের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নতুন অনুদান হিসেবে ৮ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছেন, যা এবারের নির্বাচনে কোনও প্রার্থীর একদিনে সংগ্রহ করা অনুদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে হ্যারিসই প্রথম নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ এশীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট। এই বিষয়টি তো আলোচনায় আছেই। আর এ কারণেই তিনি কৃষ্ণাঙ্গ এবং নারী ভোটারদের কাছে বেশ আলোচিত।
চলতি নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প কমলাকে নানা অশোভন ভাষায় আক্রমণ করেছেন। এমনকি কমলা হ্যারিসকে নির্বোধ ও দুর্বল বলে গালও দিয়েছেন। আর এটাই ভোটারদের কাছে কমলাকে পৌঁছে দিয়েছে। নারীদের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প মেয়েদের রক্ষা করবেন কী, তাঁর হাত থেকে মেয়েদের রক্ষা পাওয়াটাই অধিক জরুরি।
অন্যদিকে কমলা ট্রাম্পের এই বক্তব্যের বিপরীতে বলেছেন, ট্রাম্পের কথা থেকেই স্পষ্ট, নিজের শরীরের ওপর নারীর অধিকারের ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতায় তিনি বিশ্বাস করেন না। এসব বিষয় কমলাকে ভোটারদের আলোচনায় রেখেছে।
এবারের নির্বাচনে একটা প্রধান বিষয় গর্ভপাত প্রশ্নে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা। এরই মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস কিন্তু গর্ভপাতের সমর্থনে কথা বলেছেন যা সাম্প্রতিক নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটের পক্ষে ইতিবাচক বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে গর্ভপাত প্রশ্নে যে আইনি নিশ্চয়তা আমেরিকার নারীরা অর্ধশতক ধরে ভোগ করেছেন, ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক সিদ্ধান্তে তা বাতিল করেন।
ট্রাম্প গর্ব করে বলেছিলেন, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ শুধু তাঁর জন্যই সম্ভব হয়েছে, কারণ তিনি সুপ্রিম কোর্টে এমন তিনজন রক্ষণশীল বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়েছেন, যাঁরা গর্ভপাতবিরোধী। তবে তিনি এটা বুঝতে পারেন নি দেশের অধিকাংশ নারী ও পুরুষ গর্ভপাতের অধিকার সংরক্ষণের পক্ষে। ফলে গর্ভপাত প্রশ্নে কমলার অবস্থান তাকে করে তুলেছে আলোচিত।
তবে অভিবাসনসংক্রান্ত ইসুতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল কমলা হ্যারিসের। তিনি একবার অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আসবেন না’। তার এ বক্তব্যে তিনি সমালোচিত হয়েছিল ব্যাপক।
তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়া। এটি নতুন ইতিহাস রচিত হলো, আর নির্বাচনে বিজয়ী হলে হবে আরেক ইতিহাস।