• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চীনে পণ্যর দাম কমা কেন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৩, ০৪:২৮ পিএম
চীনে পণ্যর দাম কমা কেন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যখন মুদ্রাস্ফীতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন চীন মোকাবেলা করছে এর বিপরীত সমস্যা। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পেতে পেতে ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে পণ্যের দাম ক্রমশই কমছে। 
পণ্যের দাম কমার এই প্রবণতাকে বলা হয় মূল্য সংকোচন বা ডিফ্লেশন। চলতি বছরের জুলাই মাসে চীনের অর্থনীতি দুই বছরের মধ্যে প্রথম ডিফ্লেশনে চলে গিয়েছে বলে জানায় বিবিসি। দেশটিতে আগের বছরের তুলনায় কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স ০ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গিয়েছে। বিশ্বের সব দেশ যখন জ্বালানি থেকে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সমস্যা মোকাবেলা করছে, তখন ২০২৩ সালের অধিকাংশ সময় জুড়ে চীনে পণ্যের দাম ছিল স্থির।

পণ্যের মূল্য হ্রাস পাওয়া ভোক্তাদের জন্য ভালো খবর হলেও অর্থনীতিবীদরা একে অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক হিসেবে দেখেন। দীর্ঘ সময় ধরে পণ্যের মূল্য হ্রাস পেতে থাকলে ভোক্তাদের ব্যয় কম হয়। ফলে কোম্পানিগুলো পণ্যের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। তখন অনেক কোম্পানি কর্মী ছাটাই করে এবং বেতন কমিয়ে দেয়।

চীনের অর্থনীতি ডিফ্লেশন বা মূল্য সংকোচনে চলে যাওয়াতে কোভিড পরবর্তী দেশটির অর্থনীতির দৃঢ়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগেও চীন ডিফ্লেশনে পড়েছিলো, কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা এবারের পণ্যের মূল্য হ্রাস নিয়ে বেশি চিন্তিত। এর আগে ২০২১ সালে শেষবার দেশটিতে পণ্যের মূল্য হ্রাস হয়। যখন কোভিডের ফলে মানুষ লকডাউনে বন্দী ছিলো এবং কারখানাও বন্ধ ছিলো।  

বিশ্বের অন্য সব দেশে কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর মানুষ খরচ করতে শুরু করলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। অর্থাৎ পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। কিন্ত চীনের ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যায়নি।

চীনের ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য হ্রাস পাওয়ার পেছনে দেশটির মানুষের চাহিদার কমে যাওয়া বা খরচ করতে না চাওয়া প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি চায়না সেন্টারের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জর্জ ম্যাগনাস।

জর্জ ম্যাগনাসের মতে, চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ায় দামের দিকটাও দুর্বল হয়ে গেছে। একই সাথে কার্যকরী সরকারি পদক্ষেপের অভাবও এরজন্য দায়ী বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রি হওয়া অনেক পণ্য চীন থেকে যায়। চীনের মূল্য সংকোচন যদি দীর্ঘ সময় চলে তবে, অন্যান্য দেশ কম দামে চীনের পণ্য ক্রয় করতে পারবে। আর এর ফলে অন্যান্য দেশের উৎপাদন হ্রাস পাবে।

বাজারে কম দামি চীনের পণ্য দীর্ঘসময় থাকলে তা স্থানীয় ব্যবসার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বিভিন্ন দেশের উৎপাদকদের ব্যবসা বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
একইসঙ্গে চীনের বাজারে চাহিদা কমলে বিশ্বের রপ্তানি খাতেও এর আঘাত এসে পড়বে। কারণ বিশ্বের রপ্তানির একটি বড় অংশের গন্তব্য চীন।

স্বল্প সময়ের জন্য মূল সংকোচন হলে তা ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এটি চললে অর্থনীতিতে সমস্যা তৈরি করে। এরমধ্যে অন্যতম হলো বিনিয়োগ হ্রাস পায়, যার ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। দেশের প্রবৃদ্ধিও নেতিবাচক হয়ে পড়ে।  

চীনের রপ্তানিও চলতি বছরের জুলাই মাসে গত বছরের তুলনায় ১৪ দমমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যার ফলে দেশটির প্রবৃদ্ধি এ বছর আরো ধীর হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীন সরকার বলছে সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে এখন পর্যন্ত কোনো বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

জর্জ ম্যাগনাসের ভাষ্যে, “আমরা দেখতে চাই সরকার এমন পদক্ষেপ নেবে যাতে করে মানুষের আয় হয়, পকেটে টাকা আসে, যাতে করে মানুষ বাইরে গিয়ে খরচ করতে পারে। যদিও তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।”

Link copied!