• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রাক-বিয়েতে কেন এত খরচা করলেন আম্বানি পরিবার


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৪, ০৪:১৬ পিএম
প্রাক-বিয়েতে কেন এত খরচা করলেন আম্বানি পরিবার
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা গেছে বিয়ের বিশাল আনুষ্ঠানিকতা। রীতিমতো বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়েছে বিয়ের সব ছবি আর ভিডিও। বিয়ে নয়, এটি ছিল প্রাক-বিয়ের আয়োজন। যে আয়োজন করেছিলেন ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানি ও নীতা আম্বানি। তাদের ছোট ছেলের অনন্ত আম্বানির প্রাক-বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল এটি। ভারতের শিল্পপতী ভারতের বীরেন মার্চেন্টের মেয়ে রাধিকা মার্চেন্টকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন অনন্ত আম্বানি। বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ১২ জুলাই। তার আগে ১ মার্চ থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত প্রাক বিয়ের আসর বসেছিল ভারতের গুজরাট রাজ্যের জামনগরে।

জামনগরের জমকালো এই আয়োজন দেখে যে কেউ ভাববে এটি হয়তো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। কারণ টানা তিন দিনের এই আয়োজনে হাজির হয়েছিলেন বিশ্বের অন্য ধনীরাও। আর বলিউড, হলিউড তারকারা তো রয়েছেনই। এছাড়াও মেটা সিইও মার্ক জুকারবার্গ, মরগান স্ট্যানলি সিইও টেড পিক, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, ডিজনির সিইও বব ইগার, ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক, অ্যাডনক সিইও সুলতান আহমেদ আল জাবের, ইএল রথসচাইল্ডের চেয়ারম্যান লিন ফরেস্টার ডি রথসচাইল্ড, রিয়ানার উপস্থিতি ছিল বিশেষ আকর্ষণ।

তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে অতি জৌলুশ, নামীদামি অতিথিদের উপস্থিতির কারণে প্রাক্-বিয়ের এই অনুষ্ঠান বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও প্রচার পায় এ অনুষ্ঠান। সবার মনে নানা প্রশ্ন। কেন ছেলের প্রাক-বিয়েতে এত খরচা করেছেন মুকেশ আম্বানি? তাহলে বিয়ের আয়োজনেই বা কত খরচা করবেন? এর পেছনে কী কোনো কারণ রয়েছে?

নেটিজনদের অনেকের মন্তব্য, আম্বানির এই বিশাল খরচা শুধুমাত্র অর্থের নগ্ন, জঘন্য অপচয়ের প্রদর্শনী ছাড়া আর কিছু নয়। তবে অনেকে আবার ধারণা করছেন, ব্যবসায়ী পরিবার আম্বানিদের এই বিয়েসংক্রান্ত অনুষ্ঠানের একটা ‘রাজনৈতিক-অর্থনীতি’রয়েছে।

কারণ মার্কিন প্রভাবশালী ফোর্বস সাময়িকীর তথ্যমতে, বিশ্বে ধনীর তালিকায় মুকেশ আম্বানির অবস্থান নবম। আর এশিয়ার শীর্ষ ধনী তিনি। তার সম্পদের পরিমাণ ১১৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অনেকে মন্তব্য করছেন, প্রাক্‌-বিয়ের অনুষ্ঠানে বিশ্বের নামীদামি ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বিনিয়োগকারী, ব্যাংকার, উদ্যোক্তা, সিইওদের নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসার পেছনে বিপুল ‘অর্থনৈতিক মূল্য’রয়েছে। এখান থেকে নতুন ব্যবসা-বিনিয়োগ-উদ্যোগের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। যা রিলায়েন্সের সাম্রাজ্যকে বিশ্বের বুকে আরও প্রসারিত করবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই আয়োজন ফলাও করে প্রচার হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে আম্বানি তথা রিলায়েন্সের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও বাড়াবে। কারণ বিশাল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে রিলায়েন্সের ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং সারা বিশ্বে দারুণভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

 এছাড়াও এই অনুষ্ঠানের ব্যাপক সামাজিক মূল্যও রয়েছে বলে ধারণা করছেন নেটিজেনরা। এর থেকে পাওয়া সামাজিক মূলধনের (সোশ্যাল ক্যাপিটাল) সুবিধা ভবিষ্যতে আম্বানিদের তহবিলেই জমা হবে।

সবকিছু বাদ দিয়েও চিন্তা করলে এই আয়োজনের পেছনে রাজনীতিও খুঁজে পাচ্ছেন নেটিজেনরা। তাদের মতে, অনন্ত আম্বানি ‘মোদি-ভক্ত’। ২০১৯ সালের এপ্রিলে মুম্বাইয়ে ভারতের বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী জনসভায় যান অনন্ত আম্বানি। সেখানে সামনের সারিতে বসেছিলেন। সেখানে মোদির হয়ে জনগণের সমর্থনও চেয়েছিলেন। তাছাড়া আম্বানিদের পৈতৃক বাড়ি ও মোদির গ্রামের বাড়ি গুজরাটেই। প্রাক্‌-বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য গুজরাটের জামনগরকে বেছে নেওয়ার এটাও অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছিলেন অনন্ত।

শুধু অনন্ত আম্বানিই নয় মুকেশ আম্বানিও মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সম্প্রতি ‘ভাইব্রেন্ট গুজরাট গ্লোবাল সামিটে’ অংশ নিয়ে মুকেশ আম্বানি বলেছিলেন, ‘ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করেন।‘

এছাড়াও মাস কয়েক আগেই ভারতের ধনীদের বিদেশে না গিয়ে দেশের মাটিতে বিয়ের আয়োজন (ওয়েড ইন ইন্ডিয়া) করতে আহ্বান জানান মোদি। তার আহ্বানে সাড়া দিয়েই প্রাক-বিয়ের এই বিশাল আয়োজন ভারতেই সারেন আম্বানি পরিবার। ব্যবসায়ীদের এ ধরনের পদক্ষেপের আসল উদ্দেশ্য কী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ ভারতীয় সিনেমাতেই প্রতীকী হিসেবে উঠে এসেছে এমন অনেক চিত্র। তাই এই খরচা সাধারণ দৃষ্টিতে ‘অপচয়’ বলে মনে হলেও এটি ব্য়বসায়ীক দৃষ্টি থেকে বিনিয়োগ হতে পারে। যা অর্থ ও সম্মান দুটোই ভবিষ্যতে আরও বহুগুণে ফিরিয়ে দিবে বলে ধারণা করছেন নেটিজেনরা।

Link copied!