নতুন একটি ‘সুপারকন্টিনেন্ট’ বা অতিমহাদেশ গঠনের মধ্য দিয়ে ২৫ কোটি বছরের মধ্যে পৃথিবীর মানুষসহ অন্যান্য সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। সুদূর ভবিষ্যতের প্রথম
সুপারকম্পিউটার জলবায়ু মডেল ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
গবেষকরা আরও ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, কীভাবে বিশ্বের মহাদেশগুলো প্রায় ২৫ কোটি বছরে একত্রিত হয়ে একটি অতিমহাদেশ, প্যাঞ্জিয়া আল্টিমা গঠন করার পরে জলবায়ুর চরমতা তীব্র হবে।
তারা দেখতে পান যে পৃথিবী অত্যন্ত গরম, শুষ্ক এবং মানুষ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য কার্যত বসবাসের অযোগ্য হবে। কারণ এই প্রাণীগুলো অতিরিক্ত তাপে দীর্ঘ সময় থাকার জন্য বিকশিত হয়নি।
নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে সোমবার (২৫ সেপ্টম্বর) প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে উঠে আসে, প্যাঞ্জিয়া আল্টিমা গঠনের ফলে আরও নিয়মিত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হবে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড ছড়িয়ে পড়বে এবং গ্রহ উষ্ণ হবে। একই সঙ্গে সূর্যও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, আরও শক্তি নির্গত করবে এবং পৃথিবীকে আরও উষ্ণ করে তুলবে।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেষ্ঠ্য রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ও গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক আলেকজান্ডার ফার্নসওয়ার্থ সোমবার এক বিবৃতিতে জানান, “নতুন-আবির্ভূত অতিমহাদেশে ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে বিস্তৃত তাপমাত্রা থাকবে। এমনকি উচ্চ মাত্রার আর্দ্রতা দ্বারা সংমিশ্রিত দৈনিক চরম তাপমাত্রা শেষ পর্যন্ত আমাদের ভাগ্যকে সিল করে দেবে। অন্যান্য অনেক প্রজাতির সঙ্গে মানুষ বিলীন হয়ে যাবে। কারণ তারা শরীরকে শীতল করতে ঘামের মাধ্যমে তাপ বের করে দিতে পারবে না।”
ফার্নসওয়ার্থ উল্লেখ করেছেন, বর্ধিত তাপ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য খাদ্য বা জলের উত্সবিহীন পরিবেশ তৈরি করবে।
যদিও ভবিষ্যদ্বাণী করায় বড় অনিশ্চয়তা রয়েছে, তবুও বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে ছবিটি ‘খুবই অন্ধকার’ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, অতিমহাদেশে মাত্র ৮ থেকে ১৬ শতাংশ ভূমি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বাসযোগ্য থাকবে।
গবেষণা অনুসারে, কার্বন ডাই অক্সাইড বর্তমান মাত্রার দ্বিগুণ হতে পারে। যদিও এই গণনাটি এই ধারণার ভিত্তিতে করা হয়েছে যে মানুষ এখন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। “অন্যথায় আমরা সেই সংখ্যা অনেক অনেক দ্রুত দেখতে পাব,” বলে জানান লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ সিস্টেম এভুলুশনের অধ্যাপক ও একটি প্রতিবেদনের সহ-লেখক বেঞ্জামিন মিলস।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ফেলো ও সহ-লেখক ইউনিস লো বলেন, “আমাদের বর্তমান জলবায়ু সংকটের দিকে মনোযোগ না হারানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা হলো মানুষের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফল। যদিও আমরা ২৫ কোটি বছরে একটি বসবাসের অযোগ্য গ্রহের ভবিষ্যদ্বাণী করছি, কিন্তু আজ আমরা ইতোমধ্যেই চরম তাপমাত্রা অনুভব করছি যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই কারণেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন শূন্যে পৌঁছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
গত বছর প্রকাশিত জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীতে প্রাণীদের পরিবর্তন করছে। কোটি কোটি মানুষ ও অন্যান্য প্রজাতি এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাতে যাচ্ছে যেখানে তারা আর মানিয়ে নিতে পারবে না। যদি না বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ নাটকীয়ভাবে ধীর হয়।
বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে সতর্ক করছেন যে উষ্ণায়ন প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা দরকার।
এর আগে শেষ গণবিলুপ্তি ঘটেছিল প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে। যখন একটি গ্রহাণু পৃথিবীতে এসে আঘাত করেছিল এবং ডাইনোসরসহ গ্রহের বেশিরভাগ প্রাণীকে হত্যা করেছিল।
সূত্র : সিএনএন