• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩০, ১৪ রজব ১৪৪৬

হেরে গেলে কী করবেন ট্রাম্প


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৪, ১০:২৫ এএম
হেরে গেলে কী করবেন ট্রাম্প

২০১৬ সালেই ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি জিতলেই কেবল ভোটের ফলাফল মেনে নেবেন। অন্যথা ধরতে হবে ভোট চুরি হয়েছে। ২০২০ সালে জো বাইডেন ৭ কোটি ভোট বেশি পেয়েছিলেন, কিন্তু ট্রাম্পের এককথা, তিনিই জিতেছেন। কোনো প্রমাণ ছাড়া নিজের দাবি নিয়ে বারবার আদালতে গেছেন, প্রতিবারই প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। সব দরজা যখন বন্ধ হয়ে গেছে, তখন ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি হাজার দশেক সশস্ত্র সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে দ্য ক্যাপিটল (কংগ্রেস ভবন) আক্রমণ করেছেন। কাজ হয়নি, সেখানেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

২০২৪ সালে এসেও ট্রাম্প ভাঙা রেকর্ডের মতো একই কথা বলে চলেছেন। রোববার (৩ নভেম্বর) পেনসিলভানিয়ায় এক সভায় বলেছেন, ২০২০ সালের নির্বাচনের পর তার হোয়াইট হাউস ছেড়ে আসা উচিত হয়নি। তাকে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, এবারের ভোটে হেরে গেলে তিনি কি সেই ফল মেনে নেবেন? তার উত্তর, যদি কারচুপি না হয়, তিনি জিতবেন। একই প্রশ্ন বারবার করায় শুকনো মুখে বলেছেন, যদি মুক্ত ও সঠিক নির্বাচন হয়, যদি সবকিছু সৎ ভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে সেই ফলাফল তিনি মেনে নেবেন।

ট্রাম্প তার সমর্থকদের মনে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ জাগাতেই ওই ‘যদি’ কথাটা ঝুলিয়ে রেখেছেন। তিনি এখনো তার পুরানো ‘প্লেবুক’ অনুসরণ করে চলেছেন। কোনো প্রমাণ ছাড়াই তিনি দাবি করে চলেছেন, ডেমোক্র্যাটদের যোগসাজশে লাখ লাখ অবৈধ বহিরাগতদের ভোটার বানানো হয়েছে। বিদেশে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভোট নিয়েও গোপন খেলা চলেছে। তার এ কথারও কোনো প্রমাণ নেই।

২০২০ সালের নির্বাচনের পর ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ইতালি থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তার নামে দেওয়া ভোট বাইডেনের বাক্সে জমা হয়েছিল। এই হাস্যকর দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। উল্টো, অ্যারিজোনার মারিওকোপা কাউন্টিতে ট্রাম্পের তরফে ভাড়া করা সাইবার কোম্পানি সব ভোট আবার গোনার পর দেখা গেল, বাইডেনের নামে যত ভোটের হিসাব দেওয়া হয়েছে, আসলে তিনি তার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। সেই পুনর্গণনার ফলে ট্রাম্পের হিসাব থেকে ২৬১টি ভোট কমবে, বাইডেনের হিসাবে ৩৬০টি ভোট বাড়বে।

মার্কিন নির্বাচনব্যবস্থায় ভোট কারচুপির সুযোগ খুব কম। ইলেকট্রনিক ভোটের পাশাপাশি কাগুজে ব্যালট গোনার ব্যবস্থা রয়েছে। আদালতের অনুমোদন নিয়ে সে ভোট পুনর্গণনার ব্যবস্থা করা যায়। ভোট গণনার সময় দুই দলের প্রতিনিধি ছাড়াও একাধিক বেসরকারি পরিদর্শকের ব্যবস্থা আছে। এই দেশে নির্বাচনব্যবস্থা বিকেন্দ্রিক, প্রতিটি অঙ্গরাজ্য আলাদাভাবে নির্বাচন তদারকি করে থাকে। এর অর্থ ওয়াশিংটনে বোতাম টিপে কোনো পক্ষের ভোটে নয়-ছয় করার সুযোগ নেই। ক্ষমতায় থেকেও তিনি যে পরাজিত হয়েছেন, তা থেকেই এ কথা প্রমাণিত হয়। এ ছাড়া রয়েছে বহুস্তরবিশিষ্ট সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা।

তারপরও ট্রাম্পের একই গোঁ, তিনি হারেননি, ভোটে কারচুপির মাধ্যমে তাকে হারানো হয়েছে। ভয়ের কথা, তিনি একা নন, তার অনুগত লাখ লাখ সমর্থক তার কথায় বিশ্বাস করেন। এমনকি কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যদের সিংহভাগ, যারা ৬ জানুয়ারির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁরাও মনে করেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতেছেন।

এবারও যে সেই একই দৃশ্যের অবতারণা হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ট্রাম্পের অন্যতম সমর্থক, তার একসময়ের প্রধান নির্বাচনী কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের সমর্থকদের ‘লড়াইয়ের’ জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। ট্রাম্প নিজেও বারবার বলে চলেছেন, আগাম ও ডাকযোগে ভোটে বড় রকমের কারচুপি হয়েছে। তার প্রচারশিবির থেকে একটি উড়ো ভিডিও দেখিয়ে বলা হয়েছে, নাগরিক নন, এমন বহিরাগতরা ভোট দিচ্ছেন। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হাইতি থেকে আসা কিছু লোক জর্জিয়ায় একাধিকবার আগাম ভোট দিচ্ছেন।

অবশ্য মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, এটি একটি বানোয়াট ভিডিও, যা সম্ভবত রাশিয়া থেকে পাঠানো।

আরেকটি ভিডিওর দিকে ট্রাম্প–সমর্থকদের নজর গেছে। এতে পেনসিলভানিয়ার এক স্থানীয় আদালতের বারান্দায় একজনকে বাক্সবোঝাই ‘ব্যালট’ ঢেলে ফেলতে দেখা যাচ্ছে। পরে জানা গেল, ব্যালট নয়, আসলে স্থানীয় একজন ডাকপিয়ন তার নিত্যদিনের ডাক গোছাতে সেখানে চিঠিপত্র ফেলেছেন।

ধরা যাক, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলেন, তাহলে কী হবে? ২০২০ সাল থেকে এবারের বড় পার্থক্য হলো, এখন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প নন, আছেন জো বাইডেন। নিজের সমর্থকদের খেপিয়ে তুলে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা তিনি করতে পারেন, কিন্তু নিরাপত্তা প্রহরী, এমনকি ন্যাশনাল গার্ড ডেকে সামাল দেওয়ার কাজ বাইডেনই করবেন, যার পুরো প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নেওয়া শুরু হয়েছে।

২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প ও তার সমর্থকেরা বারবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, বারবারই ব্যর্থ হয়েছেন। ট্রাম্প ভেবেছিলেন, তার নির্বাচিত তিন রক্ষণশীল বিচারপতির সহায়তায় তিনি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। পারেননি। সে সময় তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন, তার মনোনীত বিচারপতিদের একজনও কিছুটা সাহস দেখালে তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকতেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকেও ট্রাম্প একই কথা বলেছিলেন। ‘নিজ দায়িত্ব পালনে সাহস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন পেন্স’—এক টুইটে (বর্তমান এক্স) মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। মার্কিন শাসনতন্ত্র অনুযায়ী, কংগ্রেসের যৌথ সভায় নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত হয়। সেই সময় সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন ভাইস প্রেসিডেন্ট। মাইক পেন্স জানতেন, নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার কোনো আইনগত অধিকার তার নেই। এই বেআইনি কাজটুকু তিনি করতে রাজি হননি বলে ট্রাম্প বিদ্রূপ করে তাকে ‘বড্ড সৎ’ বলেছিলেন।

এবারের অবস্থা ভিন্ন। কংগ্রেসের প্রত্যয়ন বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তা ছাড়া যে আইনের ভিত্তিতে নির্বাচনী প্রত্যয়ন সভা পরিচালিত হয়, তার ফাঁকফোকর বন্ধ করা হয়েছে। এখন অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে আসা নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ কম। উল্লেখ্য, কমলা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেও তার এ দায়িত্ব পালনে শাসনতান্ত্রিক বাধা নেই।

তারপরও বিপদের আশঙ্কা যে একদম নেই, তা নয়। নির্বাচনের ফলাফলে অল্প ভোটের ব্যবধান হলে ট্রাম্প যে কারচুপির কথা বলবেন ও আদালতে ছুটবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বড় ব্যবধানে পরাস্ত হলে চেঁচিয়ে খুব কাজ হবে না। আইনি লড়াইয়ের জন্য ডেমোক্র্যাটরা আইনজীবী বাহিনী নিয়ে প্রস্তুত বলে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার নির্বাচন শুধু প্রেসিডেন্ট পদের নয়, এতে একটি নতুন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ নির্বাচিত হবে। এই নির্বাচনে সম্ভবত সিনেটের নিয়ন্ত্রণভার ডেমোক্র্যাটদের হাত বদলে রিপাবলিকানদের হাতে যাবে। প্রতিনিধি পরিষদে সামান্য ব্যবধান হলেও এখন রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এবারও প্রতিনিধি পরিষদে তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে স্পিকার মাইক জনসন ট্রাম্পের অনুগত সমর্থকদের নিয়ে ঘোঁট পাকানোর চেষ্টা করতে পারেন। সেটি অভাবিত একটি ব্যাপার হবে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দলের নেতা, তাদের পক্ষে অভাবিত অনেক কিছুই সম্ভব।

৬ জানুয়ারির মতো ঘটনা কি আবারও সম্ভব? ক্যাপিটল থেকে দূরে, রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কোনো রাজ্যে এমন ঘটনা যে ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। ‘কিন্তু ওয়াশিংটনে এমন ঘটনা ঘটবে না,’ এ কথা জোর দিয়েই বলেছেন জ্যেষ্ঠ ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য জেইমি রাসকিন। তিনি বলছেন, “সে সময় হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থাকবেন না। গতবার হ্যামবার্গার খেতে খেতে টিভিতে তিনি ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গা দেখছিলেন, তা ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ নেননি। কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট থাকবেন জো বাইডেন।”

একই কথা বলেছেন কমলার প্রচারশিবিরের ব্যবস্থাপক জেন ও’ম্যালি ডিলন। তার কথায়, গত চার বছর ট্রাম্প ও তার দল ছক কষে চলেছে, কীভাবে নির্বাচনী ফলাফল নস্যাৎ করা যায়। কিন্তু তাদের জানা উচিত, “এই চার বছর আমরা ঠিক এই রকম একটা অবস্থার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা প্রস্তুত।”

Link copied!