যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বিশ্বের অন্যসব গণতান্ত্রিক দেশগুলোর চেয়ে ভিন্ন। অন্যান্য দেশে জনগণের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আর যুক্তরাষ্ট্রে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত একটি ‘নির্বাচকমণ্ডলী’ নির্বাচিত করেন জনগণ। যারা শেষ অবধি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। আর এই নির্বাচকমণ্ডলীকেই বলা হয় ‘ইলেকটোরাল কলেজ’।
এখানে ‘কলেজ’ শব্দটি মূলত সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেওয়ার অধিকারী। আর ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ শব্দটি সেই ব্যক্তিদের একটি প্যানেলকে বোঝায়। যাদের বলা হয়, ‘ইলেকটরস্’। ফলে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ হলো অঙ্গরাজ্যে ভোট দেওয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের প্যানেল বা ‘নির্বাচকমণ্ডলী’।
প্রতি চার বছর পরপর ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ বা ‘নির্বাচকমণ্ডলী’ গঠন করা হয়। যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন। মার্কিন নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ প্রথা শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্যই ব্যবহৃত হয়। অন্য সব নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় সরাসরি জনগণের ভোটে।
ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটসংখ্যা ৫৩৮। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। সর্বোচ্চ ৫৪টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ৩টি করে ভোট আছে আলাস্কা, সাউথ ডাকোটা, ভারমন্টের মতো অঙ্গরাজ্যগুলোতে। নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ইলেকটোরাল কলেজের ২৭০টি ভোট পেতে হয়।
অবশ্য, কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। আবার তা নির্ধারিত হয় সেই অঙ্গরাজ্যে সেনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক রাজ্যে দুজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলিয়ে।
ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি কেন
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লেখা হয় ১৭৮৭ সালে। সে সময় বিশাল এই দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা উন্নত ছিল না। ফলে জাতীয় পর্যায়ে স্তরে সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা ছিল কার্যত অসম্ভব। সেই সমস্যা সমাধানেই সংবিধান প্রণেতারা ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।
সংবিধান রচনার সময় সংবিধা প্রণেতারা কংগ্রেস ও জনগণের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই পদ্ধতি বাতিল করে দেন। তাদের যুক্তি ছিল পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মানুষ তাদের স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দেবে। এতে বড় রাজ্যগুলো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে।
এক্ষেত্রে ছোট ছোট রাজ্য ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিকে সমর্থন করে। কারণ, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যগুলোও ইলেকটোরালের পক্ষ নেয়। কারণ তখন সেসব রাজ্যে দাসের সংখ্যা ছিল অনেক। সে সময় দাসদের আদমশুমারিতে গণনা করা হলেও তাদের ভোটাধিকার ছিল না। শুধু তাই নয়, সংবিধান রচয়িতারা চাননি যে শুধু রাজধানীতে বসে আইন প্রণেতারা দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করুক।