অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের খরচ কত বাড়ানো হলো, তা জানিয়েছে দেশটির সরকার। বিদেশি শিক্ষার্থীদের খরচ বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি করেছে দেশটি। আগে ভিসা ফি ছিল ৪৭৩ মার্কিন ডলার, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৮ ডলার।
অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়ে আবাসন ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়ার প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলীয় সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার (১ জুলাই) থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী বেড়েই চলেছে। এত বেশি অভিবাসীর আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট। এ কারণে অ্যান্থনি আলবানেজ সরকার বেশ কয়েকবার অভিবাসী কমানোর ব্যাপারে আলোচনা করেছে। ঘোষণা দেওয়া হয়েছে খরচ বাড়ানোর।
এবার জানানো হলো, ১ জুলাই থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসায় খরচ করতে হবে আগের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হতে পারে ভারতীয়রা। কেননা দেশটি থেকে অনেকেই অস্ট্রেলিয়া যান পড়াশুনা করতে। বাংলাদেশ থেকেও একটি বড় অংশ যান অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে।
এ ছাড়া আরেকটি কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে অস্থায়ী ভিসা নিয়ে যারা গেছেন, তারা আর সেখানে থাকাবস্থায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে চাইলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি বাবদ ১ হাজার ৬শ অস্ট্রেলীয় ডলার (১ হাজার ৬৮ ডলার) গুনতে হবে। আগে এ ফির পরিমাণ ছিল ৭১০ অস্ট্রেলীয় ডলার। টেম্পরারি গ্র্যাজুয়েট ভিসাধারী শিক্ষার্থী এবং ভিজিটর ভিসাধারীদের যারা বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন, তারা সেখান থেকে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল বলেন, “যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তা আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে। এ পরিবর্তন আমাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে। এর মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ন্যায্য, আকারে ছোট এবং অপেক্ষাকৃত ভালো একটি অভিবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা যাবে।”
২০২২ সালে করোনা মহামারির বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসীদের চাপ বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় অভিবাসীদের চাপ কমাতে গত বছর থেকে শিক্ষার্থী ভিসার ওপার বিভিন্ন ধরনের কড়াকড়ি আরোপ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
মার্চে প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক নথিতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক অভিবাসনের প্রকৃত হার ৬০ শতাংশ বেড়ে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০-তে দাঁড়িয়েছে।
ভিসা ফি বাড়ানোর কারণে এখন অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করাটা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ হবে। যুক্তরাষ্ট্রে আবেদনের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকে প্রায় ১৮৫ মার্কিন ডলার এবং কানাডায় আবেদনের ক্ষেত্রে ১৫০ কানাডীয় ডলার খরচ করতে হবে।
তবে ভিসা সংক্রান্ত বিধিগুলোর ফাঁক ফোকরের সুযোগে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় তাদের অবস্থানের মেয়াদ বাড়াতে থাকে। অস্ট্রেলীয় সরকার বলেছে, ভিসা বিধির ফাঁকগুলোও তারা বন্ধ করছে।
এ ছাড়া গত মে মাস থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সঞ্চয়ের পরিমাণ (ব্যাংক ব্যালান্স) আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেয় দেশটি। অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, ভিসা পেতে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ২৯ হাজার ৭১০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জমা দেখাতে হবে। আগে ২৪ হাজার ৫০৫ অস্ট্রেলীয় ডলার ব্যাংক ব্যালান্স দেখাতে হতো।
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় রপ্তানি শিল্প খাতগুলোর একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়া সরকার এ খাত থেকে ৩ হাজার ৬৪০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার সমমূল্যের অর্থ আয় করেছে।