ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) মার্কিন কর্মকর্তারা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) এই তথ্য জানিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এপিকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনে লজিস্টিক্যাল হাব, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অস্ত্র সংরক্ষণের স্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, বিদেশি জাহাজ লক্ষ্য করে ইরান সমর্থিত হুতিদের রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার সক্ষমতাকে খর্ব করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে অস্টিন বলেন, হুতিদের মানুষবিহীন আকাশযান, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, উপকূলীয় রাডার এবং বিমান নজরদারি সক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত স্থানগুলো এই হামলার লক্ষ্যবস্তু।
অস্টিন আরও বলেছেন, নৌবাহিনীকে বিপদে ফেলতে এবং নৌপথে বিশ্ববাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে হুতিদের সক্ষমতা খর্ব করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘লোহিত সাগরে উত্তেজনা নিরসন ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাই আমাদের লক্ষ্য। তবে আমরা এটাও স্পষ্ট করতে চাই যে আমরা জীবন রক্ষা করতে সবকিছু করব। ক্রমাগত হুমকির মুখে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যপথে অবাধে বাণিজ্য বজায় রাখতে সবকিছু করব।’
এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আরও ১০ দেশ দক্ষিণ লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে আবারও হামলা চালালে পরিণতি ভোগ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার রাতে হুতিরা আবার হামলা চালায়।
১৮টি ড্রোন ও ৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ১৮ মাইল প্রশস্ত বাব এল-মান্দেব প্রণালি ও এর আশপাশে যুদ্ধজাহাজের একটি বহরকে লক্ষ্যবস্তু করে ছোড়া হয়। বাব এল-মান্দেবের ওই এলাকা লোহিত সাগরে হুতি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সবচেয়ে কাছে।
গাজায় হামাসের সমর্থনে গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝিতে সুয়েজ খালের দক্ষিণ অংশ দিয়ে যাতায়াত করা বাণিজ্যিক জাহাজকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে হুতি বিদ্রোহীরা।
দুই মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। এসব টানা হামলা চালানোর পর এখন হুতিদের লক্ষ্য করে সরাসরি হামলা চালিয়েছে ব্রিটিশ ও মার্কিনি সেনারা। হামলায় হুতিদের অস্ত্র ভাণ্ডার, কমান্ড সেন্টারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো লক্ষ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এক মার্কিন কর্মকর্তা।
বার্তাসংস্থা এপিও জানিয়েছে, হুতিদের ব্যবহৃত সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে এ দুই দেশের সেনারা। এপি আরও জানিয়েছে, হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে তোমাহোক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। যেগুলো জাহাজ থেকে ছোড়া হচ্ছে। এছাড়া যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করা হয়েছে।
হুতির এক কর্মকর্তা এর আগে জানিয়েছিলেন, রাজধানী সানায় ‘শত্রুদের হামলা’ চলছে। সানার এক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তিনি তিনটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে ২০টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে হুথিরা। এরপরই এ হামলার জবাব দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। তবে হুথিদের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়, তাদের এ হামলার পাল্টা হামলার জবাব দেবে তারা।
গত ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ওইদিন থেকেই গাজায় নির্বিচারে বিমান হামলা চালানো শুরু করে দখলদার ইসরায়েল। ইসরায়েলের এ বর্বর হামলার প্রতিবাদে লোহিত সাগরে ইসরায়েলের জাহাজে হামলা চালানো শুরু হুতি বিদ্রোহীরা। তবে তাদের এ হামলার কারণে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় বড় বড় কোম্পানিগুলো। এতে করে বিশ্ব বাণিজ্যে বড় প্রভাব পড়ে।
এসব বিষয় বিবেচনা করে হুতিদের হামলা বন্ধ করার হুমকি দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু এতে কর্ণপাত করেনি হুতিরা। তারা উল্টো জানায়, যতদিন গাজায় বর্বরতা চলবে ততদিন তাদের এসব হামলা অব্যাহত থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এমন সরাসরি হামলার পর এখন হুতিরা কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।