ইরান-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত তিন বছরে ছয় শতাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা সেই ইরানের চাবাহার বন্দর পরিচালনার জন্য ১০ বছরের এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ভারত।
চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের ভাষ্য, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের বিষয়ে বিবেচনা করা যে কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সেই প্রশ্নের জবাবে বলেন, “ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রয়েছে। ওয়াশিংটন সেগুলোর প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে।”
বেদান্ত প্যাটেল আরও বলেন, “ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে এমন যেকোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে যে, তারা নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য ঝুঁকির মাঝে নিজেদেরই উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।”
যদিও ওয়াশিংটনের এই হুমকির বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
মূলত, ইরানের সীমান্তের কাছে পাকিস্তান লাগোয়া চাবাহার বন্দর। যা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্দরের উন্নয়নের জন্য বিগত ২০১৬ সালে তেহরান-নয়াদিল্লির মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের একটা চুক্তি হয়। ২০১৮ সালের শেষের দিকে চাবাহার বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ভারত।
চাবাহার বন্দরটি পাকিস্তানের স্থলপথ এড়িয়ে আফগানিস্তান এবং মধ্য-এশিয়ায় ভারতীয় পণ্য পরিবহন ও সরবরাহের নতুন ট্রানজিট রুট খুলে দেয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে ভারত থেকে আফগানিস্তানে ২৫ লাখ টন গম ও ২ হাজার টন ডাল পাঠানো হয়েছে।
দায়িত্ব নেয়ার অর্ধযুগ পর গত সোমবার (১৩ মে) সেই চাবাহার বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য প্রাথমিক চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ইরানের সঙ্গে ভারত দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করে। যে ব্যাপারটি নিয়ে ভারতের নৌপরিবহন মন্ত্রী অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মন্ত্রী সেই চুক্তিকে “ভারত-ইরান সম্পর্কের ঐতিহাসিক মুহূর্ত” বলে অভিহিত করেন।
তথ্যমতে, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (আইপিজিএল) এবং ইরানের পোর্ট অ্যান্ড মেরিটাইম অর্গানাইজেশন চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
ইরানের সড়ক ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী মেহরদাদ বজরপাশ বলেছেন, চুক্তি মোতাবেক চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে আইপিজিএল অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের পাশাপাশি আরও প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এর ফলে চাবাহার বন্দরে ভারতের মোট বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৩৭০ মিলিয়ন ডলারে।
তবে ইরানের সঙ্গে ভারতের সেই দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষরের পরেই কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ইরানের সঙ্গে ভারতের সেই চুক্তিকে ভালোভাবে নেয়নি। উল্টোদিকে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, চুক্তিটি চাবাহার বন্দরে বড় বিনিয়োগের পথ পরিষ্কার করবে।