হামাস দাবি করেছে গাজার হাসপাতালে হামলায় ইসরায়েল আমেরিকার দেওয়া স্মার্ট বোমার ব্যবহার করেছে। তবে হামাসের ওই দাবি অস্বীকার করছে ইসরায়েল।
গাজার হাসপাতালে কারা হামলা করেছে? এ নিয়ে ইসরায়েল এবং হামাস পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছে।
ইসরায়েল বলছে, এই হামলা তারা করেনি, হামাসই হামলা চালিয়েছে। এর সঙ্গে ফিলিস্তিনের আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠীর নামও বলছে ইসরায়েল। যাদের নাম প্যালেস্তিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর গাজার আহলি আরব হাসপাতালে রকেট হামলা চালানো হয়েছিল। যে হামলায় প্রথমে ৫শ জন নিহতের কথা বলা হলেও পরে জানা যায়, মৃতের সংখ্যা ৪৭৩।
গাজার নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বলছে- হাসপাতালে হামলার জন্য ইসরায়েল স্মার্ট বোমার ব্যবহার করেছে।
অন্যদিকে গাজার হামলায় সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ শুধু হামাসের নয়। কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনও বিশ্লেষণ করে এই অভিযোগের পক্ষে মত দিয়েছেন।
গাজার হাসপাতালে হামলায় ব্যবহার হরা স্মার্ট বোমা আসলে কতটা শক্তিশালী? কী এই স্মার্ট বোমা?
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর আমেরিকার সংস্থা বোয়িং ইসরায়েলকে এক হাজার ‘স্মার্ট বোমা’ সরবরাহ করেছে। এ ছাড়াও ইসরায়েলের কাছে নিজেদের তৈরি ‘স্পাইস বোমা’ও রয়েছে। এই ‘স্পাইস বোমা’ও স্মার্ট বোমার মতোই ব্যাপক শক্তিশালী।
স্মার্ট বোমাকে গাইডেড বোমাও বলা হয়ে থাকে। এই বোমা নিখুতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। বিমান থেকে এই বোমা দিয়ে হামলা পরিচালনা করা হয়। এটির বিশেষত্ব হলো শুধু লক্ষবস্তুকেই আঘাত করবে। এমনভাবে আঘাত করবে যাতে আশপাশের কোনো ক্ষতি না হয়।
প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে এই বোমা তৈরি করে আমেরিকা। রেথিয়ান টেকনোলজিস কর্পোরেশন এবং বোয়িং ইন্টিগ্রেটেড ডিফেন্স সিস্টেমস নামে দুটি সংস্থা এই বোমা বানায়।
স্মার্ট বোমার আর এক নাম ‘প্রিসিসন গাইডেড মিউনিশন’। কিছু বোমায় ছোট রকেট মোটর লাগানো হয়। এই রকেট মোটর শুধু বোমার রেঞ্জই বৃদ্ধি করে না, তার সঙ্গে বোমার ফ্লাইট কন্ট্রোল বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
৯০৭ কেজির এই বোমায় নানা ধরনের মারণাস্ত্র লাগানো হয় যাতে অভিঘাতের প্রভাব আরও বেশি হয়। বিভিন্ন মারণাস্ত্র লাগনোর পর সেই বোমাকে ‘জয়েন্ট ডায়রেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন সিস্টেম’ বলা হয়। এই ধরনের স্মার্ট বোমা আমেরিকার হাইটেক বম্বার বি-৫২ এবং বি-১ ল্যান্সরের মাধ্যমে ফেলা হয়।
মিলিটারি অ্যানালাইসিস নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, একটি স্মার্ট বোমার তিনটি অংশ থাকে। সেগুলি হল- ওয়েপন, এটি এক ধরনের বিস্ফোরক। টার্গেটিং সিস্টেম- এই অংশটি নেভিগেশনে সহায়তা করে। আর তৃতীয়টি হল অ্যান্টি জ্যামিং ডিভাইস- শত্রুপক্ষকে গাইডেন্স সিগন্যালে বাধা দেয়।
এই তিনটি অংশ ছাড়াও স্মার্ট বোমায় রয়েছে রেডিও কমান্ড গাইডেন্স। টেলিভিশন গাইডেন্স। ইনফ্রারেড হোমিং গাইডেন্স। লেজার গাইডেন্স এবং জিপিএস রিসিভার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বোমার প্রথম ব্যবহার করেছিল আমেরিকা। পশ্চিম ইউরোপ এবং তৎকালীন বার্মায় (বর্তমান মায়ানমার) সেনা অভিযান চালাতে ১৯৪৪ সালে আমেরিকার বিমান বাহিনী ভিবি-১ অ্যাজন স্মার্ট বোমার ব্যবহার করে।
এই ধরনের একটি বোমার ওজন ছিল ৪৫০ কেজি। জায়রোস্কোপিক অটোপাইলটের সঙ্গে এই বোমা জুড়ে দেওয়া হয় যাতে লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয় এবং নিখুঁতভাবে তাতে হামলা করতে পারে। উচ্চতা, হাওয়ার গতিবেগ এবং বাতাসের চাপ সবদিক লক্ষ্য রেখে এই বোমা ফেলা হয়।
স্মার্ট বোমায় ‘সাইট’ নামে যন্ত্র লাগানো হতো সেই সময়। ফলে ওই যন্ত্রের সাহায্যেই নিশানায় নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারত এই বোমা। রাতে এই বোমা ফেলার পর তা চিহ্নিত করতে বোমার উপর আলো লাগানো হতো। সেই আলো চিহ্নিত করেই অপারেটর বোমার দিশা এবং গতি চিহ্নিত করতে পারতেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভিবি-১ অ্যাজন বোমা ব্যবহার বন্ধ করে আমেরিকা। সেই জায়গায় আনা হয় র্যাজন স্মার্ট বোমা।
স্মার্ট বোমা ছাড়াও স্পাইস বোমার ব্যবহার করছে বলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এই বোমা তৈরি করে রাফেল অ্যাডভান্স ডিফেন্স সিস্টেমস লিমিটেড। ৯০৭ কেজির এই বোমা ফেলার জন্য মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়। স্পাইস-২০০০ বোমার রেঞ্জ ৬০ কিলোমিটার।
সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা