যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে ‘আমেরিকার সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে দেশটির প্রগতিশীল সংবাদ ওয়েবসাইট হাফপোস্ট।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের নিজ বাড়িতে মারা যান কিসিঞ্জার। শতবর্ষী কিসিঞ্জারের মৃত্যুর কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে কিসিঞ্জারের মৃত্যুর সংবাদটি হাফপোস্ট ‘হেনরি কিসিঞ্জার, আমেরিকার সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী, ১০০ বছর বয়সে মারা গেছেন’ শিরোনামে প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দায়ী। তিনি এর জন্য কখনো অনুশোচনা করেননি।
কিসিঞ্জার তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও ফোর্ডের সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তাকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে কঠোর পন্থা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নৃশংসতার পরিবর্তে দেশের স্বাস্থ্য ও তৎকালীন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সাফল্যকে অগ্রাধিকার দেন।
যুক্তরাষ্ট্রকে পরিচালনা করতে গিয়েই সম্ভবত সবচেয়ে কুখ্যাত অপরাধ সংঘটন করেছেন তিনি। তিনি কম্বোডিয়ায় চার বছর গোপনে বোমা হামলা চালান। এতে অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। কম্বোডিয়া নিরপেক্ষ থাকা সত্ত্বেও সেখানে হামলা করা হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির কোনো যুদ্ধও ছিলো না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন কিসিঞ্জার পাকিস্তানের কাছে অবৈধ অস্ত্র বিক্রির নির্দেশ দেন। আর সে অস্ত্রগুলোই ১৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর নৃশংস অত্যাচার ও হামলায় ব্যবহার করা হয়।
শুধু তাই নয়, চিলির নির্বাচিত সরকার পতনেও সহায়তা করেন কিসিঞ্জার। তিনি সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠাতে সাহায্য করেন। ১৯৭৬ সালে আর্জেন্টিনার ভিন্নমতাবলম্বী ও বামপন্থীদের বিরুদ্ধে ‘নোংরা যুদ্ধ’ শুরু করেছিলেন। ফোর্ড প্রশাসনের সময় কিসিঞ্জারের নীতি আফ্রিকা, বিশেষ করে অ্যাঙ্গোলায় গৃহযুদ্ধে ইন্ধন জোগায়।
আট বছর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তারপরও তিনি অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধ করেছেন। যাতে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু তাতে তিনি অনুতপ্ত হননি। তার জন্য তাকে কোনো ধরনের মূল্য দিতে হয়নি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক অভিজাত মানুষ হিসেবে ছিলেন।