ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হতে স্বীকৃতি দিয়ে সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবে ফিলিস্তিনকে সদস্যপদ দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
শুক্রবার (১০ মে) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে ১৯৪তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পরে সেই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। তাতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৪৩টি দেশ। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় ৯টি দেশ। ভোটদানে বিরত থাকে ২৫টি দেশ।
ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, চেকিয়া, হাঙ্গেরি, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পালাউ ও পাপুয়া নিউগিনি।
বিপক্ষে অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে মূল সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে পূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধিতা করে যাবে।
বিশেষ করে দেশটির নিরাপত্তা, সীমানা ও জেরুজালেমের ভবিষ্যতের বিষয়গুলো উল্লেখ যুক্তরাষ্ট্র। তবে একইসঙ্গে তারা একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ খুঁজতে দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার প্রস্তাবেও ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবের ওপর এত দেশের সমর্থনের বিষয়টির কঠোর সমালোচনা করেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ‘আধুনিক নাৎসিদের’ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পুরস্কৃত করতে চাচ্ছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেয়ার সময় কেউ ৭ অক্টোবরের (হামাসের) হামলার ঘটনা বিবেচনায় নেয়নি।
রাষ্ট্রদূত গিলাড ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, এখন যদি সাধারণ ভোটাভুটিই চূড়ান্ত রায় হতো তবে হামাস জিতে যেত। এতে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে কর্মকাণ্ড চালাতে হামাসকে সুযোগ করে দেয়া হতো। ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের হোতা হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের একটি ছবি তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে এই লোকটি হবে দেশটির নেতা, যার লক্ষ্যই হচ্ছে ইহুদিদের বিনাশ করা।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক (সদস্য নয়) হিসেবে মর্যাদা পেয়ে আসছে ফিলিস্তিন। শুক্রবারের ভোটের পর ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, প্রস্তাব পাস হওয়ায় এটাই প্রমাণ হয় যে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও অধিকারের পক্ষে রয়েছে। একইসঙ্গে তারা দখলদার ইসরায়েলের বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে প্রথমে সংস্থাটির ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস হতে হয়। এরপর সেটি সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস হবে। তারপর প্রস্তাবটি আবার নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হয়। এ সময় ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেটি আটকে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।