• ঢাকা
  • শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

কাশ্মীরের ‘খরগোশ কন্যা’ দুই বোনের সহযোগিতায় বহু পর্যটকের প্রাণ রক্ষা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম
কাশ্মীরের ‘খরগোশ কন্যা’ দুই বোনের সহযোগিতায় বহু পর্যটকের প্রাণ রক্ষা
দুই বোন রুবিনা ও মুমতাজ। ছবি: কোলাজ

কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকায় ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মাঝেও নজির গড়লেন ‘কাশ্মীরের খরগোশ কন্যা’  খ্যাত দুই বোন রুবিনা ও মুমতাজ।

মঙ্গলবারের ভয়াবহ জঙ্গিহামলার সময়ে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বহু পর্যটককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান। তাদের সাহস মানবিকতার এই অনন্য উদাহরণ ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে।

বৈসরন উপত্যকার পাশেই থাকে এই দুই বোন। পেশায় পর্যটক গাইড রুবিনা ও মুমতাজ প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে ঘোরান, দেখান কাশ্মীরের সৌন্দর্য। দুই বোনের পরিচিত নাম ‘কাশ্মীরের খরগোশ কন্যা’, কারণ সে পর্যটকদের হাতে নিজের পোষা খরগোশ তুলে দিয়ে ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়।

হামলার দিন অন্যান্য দিনের মতোই, রুবিনা ও মুমতাজ চেন্নাই থেকে আগত একদল পর্যটকের গাইড হিসেবে ইকো পার্ক এলাকায় ছিলেন। দুপুরের দিকে আচমকা জঙ্গিরা হামলা চালালে আশেপাশের পরিবেশে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পর্যটকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন।

যখন জঙ্গিরা আচমকা হামলা চালায়, তখন একাধিক পর্যটক, যার মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরাও ছিলেন, আতঙ্কে সিঁটিয়ে গিয়েছিলেন। কেউ হাঁটতে পারছিলেন না, কেউ কাঁদছিলেন। সেই সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন রুবিনা ও মুমতাজ—প্রত্যেককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে।

তারা প্রথমে পর্যটকদের আশ্বস্ত করেন এরপর প্রথমে একটি দলকে পাহাড়ি রাস্তা ও জঙ্গলের মধ্য দিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান, সেখান থেকে যোগাযোগ করে স্থানীয় হোটেলে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন। এরপর ফিরে এসে আরও কয়েকটি দলকে একইভাবে নিয়ে যান। সেই সময় শুধু পথ দেখানোই নয়, পর্যটকদের মানসিকভাবে শান্ত রাখার কাজটাও তারা করে গিয়েছেন একনাগাড়ে। পর্যটকদের কী করতে হবে, কোথায় যেতে হবে, সেই নির্দেশনা দিয়ে আশার আলো দেখিয়েছেন তারা।

শিশু ও বয়স্ক পর্যটকদের যেন কোনওরকম ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দেন দুই বোন। আতঙ্কিত পর্যটকদের নিজেদের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেন এবং পরবর্তীতে তাদের হোটেলে পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ারও যথাযথ ব্যবস্থা করেন। শুধু শারীরিক সহায়তা নয়, আতঙ্কিত মানসিক অবস্থায় থাকা পর্যটকদের সাহস ও মানসিক শক্তি জোগাতেও তারা ভূমিকা পালন করেন।

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রুবিনা বলেন, “সেই মুহূর্তে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল পর্যটকদের প্রাণ রক্ষা করা। আমরা আমাদের নিরাপত্তার কথা ভাবিনি। সবাই কাঁপছিল, শুধু বলছিল, আমাদের বাঁচাও। আমরা সেই ডাকের প্রতিধ্বনি হতে পেরেছি — এটাই আমাদের প্রাপ্তি।”

দেশ জুড়ে এই দুই বোনের সাহসিকতা ও মানবিকতা এখন প্রশংসিত হচ্ছে। সাধারণ গাইডের ভূমিকায় যারা কাজ করছিলেন, তারা এক মুহূর্তে হয়ে উঠলেন রক্ষাকর্তা।
খবর- আনন্দবাজার 

Link copied!