বিতর্কিতদের নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন, আছেন যৌন নিপীড়নে অভিযুক্তরাও


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৪:২৪ পিএম
বিতর্কিতদের নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন, আছেন যৌন নিপীড়নে অভিযুক্তরাও
ট্রাম্প প্রশাসন। ওপরে বামে পিট হেগসেথ, ডানে তুলসী গ্যাবার্ড, নিচে বামে ম্যাট গেটজ ও ডানে রবার্ট কেনেডি জুনিয়র।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। এবার তার বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ট্রাম্প তার নতুন প্রশাসনের শীর্ষ পদে মনোনয়ন দেওয়া কয়েকজনের নামও ঘোষণা করেছেন। যাদের বেশিরভাগই বিতর্কিত বলে অভিযোগ উঠেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনে মনোনয়ন পাওয়াদের নিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। যাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে মনোনীত ম্যাট গেটজে। কট্টর এই রিপাবলিকান নেতার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে।

শুধু তাই নয়, নারী পাচারের অভিযোগে কয়েক বছর ধরে গেটজের বিরুদ্ধে তদন্তও চলেছে। যদিও তিনি নিজেকে বরাবরই নির্দোষ বলে দাবি করে আসছেন। কারণ, তার বিরুদ্ধে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়নি। শুধু তদন্ত চলছে মাত্র।

সমালোচকদের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের বড় পদে মনোনয়নের মধ্য দিয়ে গেটজ অপরাধের তদন্ত থেকে মুক্তি পাবেন। অনেকে বলছেন, বিচার বিভাগের শীর্ষ পদে গেটজের মতো নিজস্ব লোক বসানোর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পও সুবিধা নিতে পারেন। কারণ, ট্রাম্প বরাবরই বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন।

বিতর্কের তালিকায় পরের অবস্থানে আছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেতে যাওয়া টেলিভিশন সংবাদ উপস্থাপক পিট হেগসেথকে নিয়েও। কারণ তিনি শুধুই ফক্স নিউজ নেটওয়ার্কের সঞ্চালক। বড় কোনো প্রতিষ্ঠান চালানোর মতো কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ট্রাম্প প্রশাসনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন টিকাবিরোধী ও চিকিৎসাশাস্ত্রে ষড়যন্ত্রের তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প আর কেনেডি।

অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসা–সংক্রান্ত বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দেওয়ার ইতিহাস আছে কেনেডির। কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাকে তিনি প্রাণঘাতী বলে উল্লেখ করে বিতর্কিত হয়েছিলেন। বরাবরই টিকার বিরোধিতা করে থাকেন কেনেডি। তার দাবি, শৈশবে দেওয়া টিকাগুলো শিশুদের প্রতিবন্ধী করে দেয়। যদিও তার দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

অবশ্য, বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, মনোনীত হওয়ার পরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কেনেডি জুনিয়র। আবেগতাড়িত হয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “দীর্ঘস্থায়ী রোগের মহামারির অবসানে বিজ্ঞান, ওষুধ, শিল্পকারখানা এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোকে একত্র করার মতো সুযোগ আছে।”

কেনেডির আলাপে বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত বিষয় উঠে এসেছে সেসবের প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় ট্রাম্পের ভাষ্যেও। ট্রাম্প বলেন, “শিল্পজাত খাদ্যজনিত জটিলতা এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর ধোঁকাবাজি, অপতথ্য ও অপপ্রচার মার্কিন নাগরিকদের ধসিয়ে দিচ্ছে।” ট্রাম্প আশা করছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে কেনেডি এসব সংস্থাকে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে এসেছেন জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক হিসেবে মনোনীত হওয়া তুলসী গ্যাবার্ডও। তার মনোনয়ন নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গ্যাবার্ডের ভাষ্য হচ্ছে, ‘নিরাপত্তাজনিত বৈধ উদ্বেগ’ থেকে নাকি ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তার এমন বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ রাশিয়ার পক্ষে যাওয়ায় সদ্য মনোনীত জাতীয় গোয়েন্দা প্রধানকে নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছে।

এদিকে, ট্রাম্প ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার ব্যক্তিগত আইনজীবী টড ব্লেঞ্চ এবং অ্যামিল বোভকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব দেবেন। যারা পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে চুপ রাখতে ঘুস দেওয়ার মামলায় চলতি বছরে বিচার চলাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে লড়াই করেছিলেন। বিতর্কিত এই দুই আইনজীবীর মনোনয়ন নিয়েও তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। আগামী জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি শপথ নেবেন। তবে তার আগেই নিজ প্রশাসনে কাকে কাকে নিয়োগ দেবেন, তা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে অনেককে মনোনীতও করেছেন। আর তার প্রতিটি মনোনয়ন নিয়েই কম বেশি আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।

সমালোচকদের দৃষ্টিতে, শুরুর দিকে ট্রাম্প তার প্রশাসনের জন্য ফ্লোরিডা সিনেটর মার্কো রুবিওসহ যাদের নাম ঘোষণা করেছেন, সেগুলো প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবে পরের দিকে ট্রাম্প–ঘোষিত নামগুলো নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ছেন। ডেমোক্র্যাটরা তো বটেই, এমনকি রিপাবলিকানদেরও অনেকে হতাশা প্রকাশ করেছেন। কারণ, দক্ষতা বা যোগ্যতার চেয়ে কে কত অনুগত, তাকে নিয়োগ দেওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন  ট্রাম্প। 

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!