ভয়াবহ দাবানল গ্রাস করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। লস অ্যাঞ্জেলেসে লাখো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা প্রতিমুহূর্তে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা দাবানল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৪ জন মানুষ।
স্মরণকালের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এই দাবানল ছড়িয়ে পড়ার পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে সান্তা অ্যানা নামের ঝোড়ো বাতাস। সম্প্রতি বাতাসের গতি কিছুটা কমে আসায় দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল। তবে ভয়ঙ্কর বাতাসের গাতি আবার বাড়তে শুরু করেছে। আগেও চেয়েও বিপজ্জনকভাবে দাবানল আরও নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকায় বাতাসের তীব্রতা বেশি। পাশাপাশি পরিবেশ খুবই শুষ্ক। এই দুইয়ে মিলে ‘বিশেষ বিপজ্জনক পরিস্থিতি’ তৈরি করেছে। আবহাওয়াবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপজ্জনক এই পরিস্থিতিতে দাবানলদুর্গত এলাকাগুলো রয়েছে বিরল ‘আগুনে টর্নেডোর’ ঝুঁকিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বিরল এক বিপজ্জনক অবস্থা। যেখানে দাবানল তার নিজস্ব আবহাওয়া তৈরি করে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে বড় ও আরও বিপজ্জনক আকারের নতুন দাবানল দেখা দিতে পারে জানাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর। যদিও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আগুনে টর্নেডোর বিষয় উল্লেখ করা হয়নি, তবে আবহাওয়াবিদ টড হলের ভাষ্য, বর্তমানে আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন। যা আগুন টর্নেডো সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। আর এমন আশঙ্কার মধ্যেই সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড ফ্ল্যাগ’ জারি করেছে জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর।
অন্যদিকে, লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের বিপজ্জনক ধোঁয়া থেকে বাঁচতে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। সংস্থাটি জানাচ্ছে, ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে আরও এক সপ্তাহ ধরে তীব্র বাতাস বয়ে যেতে পারে। লস অ্যাঞ্জেলেস ও ভেনচুরা কাউন্টির কিছু অংশে দুদিন আগে রাতে প্রবল ঝোড়ো বাতাস বয়ে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে ম্যাজিক মাউন্টেইন এলাকায় যার গতি ছিল ঘণ্টায় ৭২ মাইল। মিল ক্রিক, স্যান্ডস্টোন পিক, চিলাও ও পালো সোলা এলাকাতে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২ মাইল পর্যন্ত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দাবানলটি লস অ্যাঞ্জেলেসে শুরু হয় গত ৭ জানুয়ারি। সেখানকার প্যালেসেইডস ও এটন দাবানল দুটিকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলা হচ্ছে। যাতে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে অন্তত ১৪৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা। ভৌগোলিক হিসাবে, এই আয়তন নিউইয়র্কের ম্যানহাটান এলাকার আড়াই গুণ। দাবানলের বিপর্যয়ে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে অন্তত ১২ হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৫৭ হাজার অবকাঠামো। এখন পর্যন্ত দাবানলে প্রাণহানির সংখ্যা ২৪ জনে পৌঁছেছে।