সব সরকারি কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন থেকে চীনা মালিকানাধীন জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩০ দিনের মধ্যে সরকারি ডিভাইস থেকে টিকটক অ্যাপ সরিয়ে ফেলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন নির্দেশনাকে ‘অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে উল্লেখ করেছে চীন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত সোমবার হোয়াইট হাউস সরকারি সংস্থাগুলোর সব ধরনের ডিভাইস থেকে টিকটক অ্যাপ সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছে। টিকটকের বিরুদ্ধে তথ্য পাচারের অভিযোগও তুলেছে হোয়াইট হাউস। যদিও অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছে টিকটক। কয়েক সপ্তাহ আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাও একই ঘোষণা দিয়েছিল।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মার্কিন ডেটা সুরক্ষিত রাখতে ফেডারেল সংস্থাগুলোকে অবশ্যই ফোন ও অন্যান্য সিস্টেম থেকে টিকটক সরিয়ে ফেলতে হবে। টিকটকের কোনো সংযোগ যেন সরকারি কোনো নেটওয়ার্কে না থাকে, সে বিষয়েও কঠোরভাবে বলা হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে বিদেশি সংস্থাগুলোকে দমন করার জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার বলে অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র মাও নিং সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি। মার্কিন সরকারের উচিত বাজার অর্থনীতি এবং প্রতিযোগিতাকে সম্মান করা। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে দমন বন্ধ করা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য একটি উন্মুক্ত, ন্যায্য এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তির একটি দেশ নিজের সম্পর্কে কতটা নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে পারে যে তারা তরুণদের প্রিয় অ্যাপটিকে এমন ভয় পায়?”
এদিকে অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং কানাডার মতোই টিকটক নিষিদ্ধ করে সুপারিশ করলেও তাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে কোনো সাড়া পায়নি।
টিকটক দাবি করেছে যে তারা চীন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের কোনো তথ্য সরবরাহ করে না এবং চীন থেকে কেউ মার্কিনদের ডেটায় প্রবেশাধিকার পাবেন কিনা, সে সিদ্ধান্তও যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় কর্মীদের হাতে থাকে।
সোমবার অফিস অব ম্যানেজমেন্ট ও বাজেট বিভাগের পরিচালক শালান্দা ইয়াং সরকারি সংস্থাগুলোকে বলেছেন, গোপন ডেটা রক্ষা করার জন্য সকল সরকারি কর্মকর্তাদের ফোন থেকে অ্যাপটি মুছে ফেলতে হবে।
ইতোমধ্যে বেশ কিছু সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের ফোনে টিকটক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এগুলো হলো হোয়াইট হাউস, প্রতিরক্ষা বিভাগ, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও স্টেট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তথ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা ক্রিস ডিরুশা বলেছেন, “এই পদক্ষেপ আমাদের ডিজিটাল অবকাঠামো সুরক্ষিত এবং আমেরিকান জনগণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বাইডেন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতিগুলোর একটি।”
কানাডায়ও নিষিদ্ধ টিকটক
মঙ্গলবার থেকে কানাডায় সব ধরনের সরকারি ডিভাইসে ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সরকার। দেশটির প্রধান তথ্য কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত একটি পর্যালোচনার পরেই এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ওই অ্যাপ গোপনীয়তা ও তথ্যের সুরক্ষার ক্ষেত্রে ‘মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে’ বলে কানাডার প্রধান তথ্য কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। এরপরই দেশটির কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “ওই অ্যাপের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে ‘যথেষ্ট উদ্বেগ’ তৈরি হয়েছিল বলেই এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। হতে পারে এটাই প্রথম পদক্ষেপ। আবার এমনও হতে পারে, এরপর আর কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে না।”
টিকটকের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তগুলো কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই গৃহীত হয়েছে। বিষয়গুলো রাজনৈতিক। এমন সিদ্ধান্ত আমাদের কোম্পানি হতাশ করেছে।”