গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আকস্মিক রকেট হামলা চালানোর পর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী স্থল ও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বিরামহীনভাবে। ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ২৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী।
এই যুদ্ধে ইসরায়েলের বিপক্ষে হামাস ছাড়াও লড়াই করছেন লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। তারা ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে রকেট ছুড়ছেন। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে লেবাননের বিভিন্ন স্থানে। ইসরায়েলের হামলায় লেবাননের বৈরুতে প্রাণ হারিয়েছেন হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-আরৌরি।
এদিকে ইসরায়েলের এই আগ্রাসন বন্ধে ইয়েমেনের হুতিরা লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হামলা চালানো শুরু করে। তারা বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি জাহাজ জব্দ করে। হুতিদের হামলার কারণে লোহিত সাগর দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল কমে যায়। বিকল্প পথে ভূমধ্যসাগর দিয়ে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম শুরু করে বিভিন্ন দেশ। বিকল্প এ পথ ব্যবহার করায় পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যায় অনেক গুণ। তা ছাড়া বাড়তি সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত দিন। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
এর পরিপ্রেক্ষিতে হুতিদের লক্ষ্য করে ইয়েমেনে হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। হামলায় ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত এখনো ফিলিস্তিনের গাজাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার মতো রূপ নেয়নি এখনো। তবে কয়েক দিন ধরে এ অঞ্চলে যেসব ঘটনা ঘটেছে, ততে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি গুরুতর হয়ে উঠছে।
সাম্প্রতিক সময়ে লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজগুলোতে ১৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। হুতিদের বিশ্বাস, ইসরায়েল বা দেশটির মিত্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এ জাহাজগুলোর। তবে গত রোববারের আগ পর্যন্ত এই বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি যুক্তরাষ্ট্র। রোববারই প্রথম লোহিত সাগরে তিনটি হুতি নৌকা লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে ১০ হুতি বিদ্রোহী নিহত হন।
সৌদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘদিনের শত্রুতা ইরানের। মূলত এ কারণেই হুতিদের সমর্থন দিয়ে আসছে তেহরান। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ করা গোয়েন্দা তথ্যে জানানো হয়েছে, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুতিদের হামলায় সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ইরানের।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এসব হামলার পর নিজ দেশে জনসমর্থন বেড়েছে হুতিদের। তাঁরা এটাও বিশ্বাস করেন যে লোহিত সাগরে হামলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হুতিরা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন।
হুতিদেরও দমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি গোষ্ঠীটি বলেছে, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে অনুমতি এবং ইসরায়েলের হামলা বন্ধ করা ছাড়া তারা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বন্ধ করবে না। তাদের ওই হিসাবনিকাশে বদল না এলে যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ইয়েমেনের বিভিন্ন হুতি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এতে তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় পরিসরে মুখোমুখি হতে পারে এ দুই দেশ, যা এড়াতে চাইছেন বাইডেন।
তবে কি হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়ল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য? আর তাদের বিপক্ষে হামাসের সঙ্গে লড়ছেন লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। এবার যুদ্ধে জড়ালেন ইয়েমেনের হুতিরাও। তাহলে কি মধ্যপ্রাচ্যে বড় যুদ্ধের দামামা বেজে উঠছে?
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান