পাকিস্তানে নেক্রোফিলিয়া মামলার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাবা-মায়েরা তাদের মৃত কন্যাদের ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে কবর লোহার খাঁচা দিয়ে ঢেকে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে বলে ভারতের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে। এসব সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এসব প্রতিবেদনে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডেইলি টাইমসের “অনিরাপদ কবর” শিরোনামে একটি সম্পাদকীয়র বরাতও দেওয়া হয়। এমনকি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ সংক্রান্ত একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে সঠিকভাবে যাচাই করার পর জানা গেছে, ভাইরাল ওই ছবিটি আসলে পাকিস্তানের কোনো কবরস্থানের কিংবা কবরের ছবি নয়। কবরের ওই ছবিটি বরং ভারতের হায়দ্রাবাদের মাদন্নোপেট এলাকার দারাব জং কলোনির একটি কবরস্থানের।
মূলত, অনুমতি ছাড়া পুরনো কবরের উপর লাশ দাফন করার কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে কেউ যেন এক লাশের ওপর আরেক লাশ দাফন করতে না পারে সেজন্য পরিবারগুলো সেখানে গ্রিল লাগিয়ে দিয়েছে।
ছবিটি রিভার্স সার্চ করলে দেখা যায়, ভারতের হায়দ্রাবাদ শহর থেকে পরিচালিত সংবাদমাধ্যম তেলেঙ্গানা টুডে-এর একটি প্রতিবেদনে ছবিটি যুক্ত।
ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা ‘অল্ট নিউজ’ গত ৩০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অল্ট নিউজ জানিয়েছে, ছবিটি হায়দ্রাবাদের মাদন্নোপেট এলাকার দারাব জং কলোনির স্থানীয় মসজিদ সালার মুলক সংলগ্ন একটি কবরস্থানের।
কবরস্থান সংলগ্ন মসজিদের মুয়াজ্জিন মুক্তার অল্টনিউজকে জানান, অনুমতি ছাড়া পুরনো কবরের উপর লাশ দাফন করার কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে কেউ যেন এভাবে এক লাশের ওপর আরেক লাশ দাফন করতে না পারে সেজন্য পরিবারগুলো সেখানে গ্রিল লাগিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, সবুজ খাঁচায় আটকানো কবরটি একজন সত্তোর্ধ্ব নারীর। হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা জ্বলিলরাজা আবু আব্দুলহাদি কবরস্থানে গিয়ে সেখানের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। তিনিও নিশ্চিত করেছেন ছবিটি পাকিস্তানের নয় বরং ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের।
এছাড়া আলোচ্য ওই কবরটি নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তেলেঙ্গানার একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘টিএনএনিউজ’। গুগল ম্যাপেও ওই স্থানে কবরের ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
বুম বাংলাদেশ ছবি সংক্রান্ত সকল তথ্য যাচাই করে একটি নিবন্ধে এসব কথা জানিয়েছে।
এ সব কিছুই আসলে প্রমাণ করে দেয় লোহার খাঁচা দিয়ে আটকানো ছবিটি পাকিস্তানের নয় বরং ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের। সুতরাং ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের একটি কবরের ছবিকে পাকিস্তানে মৃতদেহ ধর্ষণ বা নেক্রোফিলিয়া সম্পর্কিত খবরের সঙ্গে জুড়ে প্রচার করা বিভ্রান্তিকর এবং ভুল সংবাদ।
এই সংবাদের তথ্যটি ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম থেকে নিয়ে `সংবাদ প্রকাশ` এ পাবলিশ করা হয়েছিল। যা পরবর্তীতে ‘ফেইক’ বলে জানা যায়। পরবর্তীতে সংবাদটি সংশোধন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এরকম সংবাদের ক্ষেত্রে ‘সংবাদ প্রকাশ’ আরও বেশি সতর্ক থাকবে।