শনিবার (২৪ আগস্ট) গ্রেপ্তার হয়েছেন বার্তা আদান-প্রদানের জনপ্রিয় অ্যাপ টেলিগ্রামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পাভেল দুরভ। সেদিন সন্ধ্যায় নিজের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে দেশটির লো বোর্গেট বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সেদিন তার সঙ্গে উড়োজাহাজে ছিলেন আরও একজন। এক স্বর্ণকেশী তরুণী। বলা হয়, ওই তরুণী হলেন পাভেলের পরামর্শক (ক্রিপ্টো কোচ)। তবে পাভেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে এই তরুণীর খোঁজ পাচ্ছে না তার পরিবার।
ফ্রান্সের গোপনীয় তথ্যবিষয়ক গবেষক ব্যাপ্টিস্ট রবার্ট এবং আরও অনেকের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টের তথ্য মিলিয়ে দেখেছেন, ২৪ বছর বয়সী জুলি ভাবিলুভা নামের ওই তরুণী গত সপ্তাহে পাভেলের সঙ্গে আজারবাইজানে ভ্রমণ করেন। ওই সময় তিনি একাধিক মোহনীয় ছবি শেয়ার করেন। এরপর অনলাইনে নানা জল্পনাকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন এই তরুণী। তিনি একজন ভিডিও গেম স্ট্রিমারও।
অনলাইন পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, গ্রেপ্তারের আগে এসব পোস্টের মধ্য দিয়েই সম্ভবত নির্বাসিত রাশিয়ান এই ধনাঢ্য ব্যক্তির গতিবিধি সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাওয়া গেছে।
রবার্ট দ্য পোস্টকে বলেন, ‘এটা বলা কঠিন, এই তরুণীর পোস্ট পাভেলের গ্রেপ্তারে সরাসরি ভূমিকা রেখেছে কি না; কিন্তু আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে অনুসরণ করলে খুব সহজেই পাভেলের গতিবিধি ধরতে পারবেন।’
জুলির পরিবারের পক্ষ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলা হয়, পাভেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তারা মেয়ের খোঁজ পাচ্ছেন না।
পাভেলের গ্রেপ্তার এক্সের মালিক ইলন মাস্কসহ প্রযুক্তির জগতে যারা বাক্স্বাধীনতা চান, তাদের ক্ষুব্ধ করেছে। তাদের দাবি, পাভেল টেলিগ্রামের এনক্রিপশন প্রযুক্তিতে সরকারকে হস্তক্ষেপের করার সুযোগ না দেওয়ায় রোষানলে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, টেলিগ্রাম অ্যাপ এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিরাপদ যোগাযোগের সুবিধা দেয়। এতে তৃতীয় পক্ষ ঢুকতে পারে না।
তবে পাভেলের সঙ্গে জুলির কী সম্পর্ক তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা এই তরুণীর সব অ্যাকাউন্ট তাঁর মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণের ছবি ও ভিডিওতে ভরা। জুলির যে সময় ভ্রমণ করেন, দেখা যায় টেলিগ্রামের সিইও পাভেলও ঠিক ওই সময়গুলোতে সেসব জায়গায় ভ্রমণ করেছেন।
রবার্ট এক্সে পোস্ট করা দুজনের এ ধরনের বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও একত্র করেছেন। এর মধ্যে গ্রীষ্মের আগে উজবেকিস্তানে দুজনের একসঙ্গে থাকা কিছু ভিডিও রয়েছে, যেগুলো ধারণ করেছিল রাশিয়ান একজন ব্লগার।
অন্য একটি পোস্টে দেখা যায় ২১ আগস্ট আজারবাইজানে গাড়িতে যাত্রীর আসনে জুলি বসা আর পাভেল গাড়ি চালাচ্ছেন। সেগুলোর সঙ্গে আরও দুটি ছবি পোস্ট করা ছিল। সেগুলোতে দেখা যায় একই জায়গায় দুজনের ছবি এবং পরে দেখা যায়, দুজনেই দেশটির রাজধানীর একই হোটেলের ছবি পোস্ট করছেন।
জুলি ও পাভেলের কীভাবে দেখা হয়েছে এটি এখনো অজানা। তবে দুজনই দুবাইয়ে থাকেন। সেখান থেকে এখন টেলিগ্রাম পরিচালনা হচ্ছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে পাভেল ও তাঁর ভাই নিকোলাই টেলিগ্রাম অ্যাপটি চালু করেন। এখন এই অ্যাপের গ্রাহকসংখ্যা ৯৫ কোটির বেশি বলে গত মাসে পাভেলের দেওয়া এক পোস্টে দাবি করা হয়।
তবে ক্রেমলিনকে টেলিগ্রামের এনক্রিপটেড তথ্য দিতে রাজি না হওয়ায় ২০১৪ সালে তাকে রাশিয়া ছাড়তে হয়েছিল।
টেলিগ্রামের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাভেল লুকিয়ে ছিলেন না, পালিয়েও ছিলেন না। তার রাশিয়া ও ফ্রান্সের নাগরিকত্ব রয়েছে। তাই তিনি প্রায়ই ইউরোপ সফর করতেন।’
টেলিগ্রাম ব্যবহার করে শিশু পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাভেলের বিরুদ্ধে সার্চ পরোয়ানা জারি করে। তাঁর এই গ্রেপ্তার নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কৌতূহল ও প্রশ্ন উঠেছে।
ফ্রান্সের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, টেলিগ্রামকে ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী মাদক পাচার, শিশু পর্নোগ্রাফি ও যে প্রতারণার ঘটনা ঘটে, সেগুলোর একজন সহযোগী পাভেল। আর এসব হয় টেলিগ্রামে কনটেন্ট সম্পাদনা খুব একটা হয় না বলেই। এই অ্যাপের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারও হয় লাগামছাড়া।