স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে বিশ্বের মোড়ল খ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। যে নির্বাচন পাল্টে দিতে পারে গোটা বিশ্বের রাজনীতির চেহারাই। আন্তর্জাতিক রাজনীতির অনেক হিসাব নিকাশও বদলে যেতে পারে। যে কারণে বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের ভোটযুদ্ধে কে বিজয়ী হবেন তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আগাম ঘোষণাও দিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে ট্রাম্প আর কমলার মধ্যে কে হচ্ছেন বিশ্বমোড়ল তা জানতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আর অনেকটা সময়।
ইতোমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন সাত কোটি ৭০ লাখের বেশি মার্কিন ভোটার। তবে ফলাফল নির্ধারণকারী সাত দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ভোট এখনও বাকি। যা শেষ হবে ৫ নভেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে। এসব রাজ্যের মধ্যে প্রথম যে দুটি রাজ্যের ফলাফল সবার আগে আসতে শুরু করবে, সেটা থেকেই পূর্বাভাস পাওয়া যাবে কে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হতে যাচ্ছেন।
সাতটি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সবার আগে জর্জিয়ায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ও নর্থ ক্যারোলাইনায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার কিছু সময় পর থেকে বুথফেরত ফলাফল আসতে শুরু করবে। তা থেকে অনুমান করা যাবে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের নাম। এ দুটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে যে পার্টির প্রার্থী এগিয়ে থাকবেন তিনিই হবে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কারণ বাকি পাঁচ অঙ্গরাজ্যের ফলাফল সার্বিক ফলাফলে এককভাবে এতটা প্রভাবিত করতে পারবে না।
এর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ও মিশিগানের অধিকাংশ এলাকায় ভোট শেষ হবে স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। উইসকনসিন, অ্যারিজোনা ও মিশিগানের উত্তরাঞ্চলীয় কিছু এলাকার ভোট শেষ হবে স্থানীয় সময় রাত ৯টায়। আর সর্বশেষ নেভাদায় শেষ হবে রাত ১০টায়।
এবারই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত কোনো নারী প্রার্থীর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভোটযুদ্ধে জয় পেলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাবেন কমলা। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো অংশে কম নন। হাড্ডাহাড্ডি ভোটযুদ্ধের ফলাফলে ট্রাম্পও হয়ে যেতে পারেন বিজয়ী।
নির্বাচনী প্রচারণায় ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দলীয় দুই নেতা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ করলেও, দু’জনই ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছেন। দুই প্রার্থীই গাজায় বোমাবর্ষণ, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করা, চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া, রোগের বিস্তার ঘটানো এবং জোরপূর্বক স্থানান্তর প্রভৃতি ভয়ঙ্কর নীতির প্রশ্নে নিশ্চুপ। ট্রাম্প কিংবা কমলা, যিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না কেন, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে কতটুকু কার্যকর হবে তা বলা মুশকিল।
অন্যদিকে চীনের জনগণও অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে নজর রাখছেন। অবশ্য তাদের মধ্যেও কিছুটা শঙ্কাও কাজ করছে। ইউক্রেনের নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল নিয়ে চিন্তায় আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করায় মস্কোর আগ্রহ অন্যদের চেয়ে বরং বেশিই থাকার কথা। একইভাবে ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোতেও মার্কিন নির্বাচনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। যে কারণে এই মহাদেশের দেশগুলোও তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে।