• ঢাকা
  • বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে দেশের ভিক্ষুকরা প্লেনে চড়ে বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা করেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৪:৪৪ পিএম
যে দেশের ভিক্ষুকরা প্লেনে চড়ে বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা করেন
বিমান করে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে ভিক্ষা করেন পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা। ছবি: সংগৃহীত

ভিক্ষুকরা দল বেঁধে প্লেনে উঠে বিভিন্ন বিদেশে যাচ্ছেন শুধু ভিক্ষা করার জন্য। আর ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য তারা খরচও করছেন ভালো অংকের মার্কিন ডলার। এমন ঘটনা শুনলে নিশ্চয়ই যে কেউ চমকে উঠবেন। তবে এটাই বাস্তবতা, যদি সে দেশটা হয় পাকিস্তান।

মূলত পাকিস্তান থেকে দলে দলে ভিক্ষুক মধ্যপ্রাচ্যের বিমানে চড়ছেন– এ ঘটনা আর নতুন নয়। এসব ভিক্ষুকের গন্তব্যের শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। সেখানে তারা হজ ভিসার সুবিধা কাজে লাগিয়ে থাকে। কারণ এ ভিসার জন্য ব্যাংক হিসাবের তথ্য, কর সংক্রান্ত কাগজপত্র, পেশাগত আয় এবং সম্পত্তির বিবরণীর মতো জটিল নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

পাকিস্তানের ভিক্ষুবৃত্তি বর্তমানে প্রায় সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক ব্যবসা হয়ে উঠছে। দেশটির ভিক্ষুকরা ইরান থেকে সৌদি আরব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছেন। গত আগস্ট মাসে ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) মুলতান বিমানবন্দরে সৌদি আরবগামী একটি ফ্লাইট থেকে ১৬ জন ভিক্ষুককে নামিয়ে দেয়। তারা জানিয়েছিলেন, তারা ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য এজেন্টদের ১ লাখ ৮৫ হাজার রুপি (প্রায় ৬৬০ মার্কিন ডলার) দিয়েছেন।

পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ভিক্ষুকদের বিষয়টা জানা যায় পাকিস্তানের বিখ্যাত ডন পত্রিকার সম্পাদকীয়তেও। ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বরে পত্রিকাটি লিখেছিল, “পাকিস্তানের লাখ লাখ মানুষ তাদের একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছেন। অনেকেই জটিল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। যা ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করেছে।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চপদস্থ কূটনীতিকরা মাসের পর মাস ধরে পাকিস্তানের অস্বাভাবিক ভিক্ষাবৃত্তির ঘটনাটি তুলে ধরছেন। তারা এটাও বলছেন, বিভিন্ন দেশের কারাগারগুলো পাকিস্তানি ভিক্ষুক দিয়ে ভরে গেছে। কূটনীতিকরা পাকিস্তান সরকারকে এ বিষয়ে কিছু করার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।

গত মাসে এফআইএ মুলতান বিমানবন্দরে সৌদি আরবগামী ফ্লাইট থেকে ১৬ জন ভিক্ষুককে নামিয়ে দেওয়ার সপ্তাহ খানেক পরে একই বিমানবন্দরের আরও একটি ফ্লাইট থেকে ৮ জনকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তারা সবাই দক্ষিণ পাঞ্জাব জেলার বাসিন্দা। জেলাটি পাকিস্তানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকের দিক থেকে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে।

নামিয়ে দেওয়া ব্যক্তিরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তারা ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য এজেন্টদের ১ লাখ ৮৫ হাজার রুপি (প্রায় ৬৬০ মার্কিন ডলার) দিয়েছেন। কিছু ভিক্ষুক তাদের সহায়তাকারীদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এমন চুক্তি অনুযায়ী তারা ভ্রমণ খরচ এবং ভিসা নথির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ভিক্ষা থেকে আয়ের ৫০ শতাংশ এজেন্টদের পরিশোধ করবে।

এদিকে, সৌদি আরবে পাকিস্তানি ভিক্ষুকদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এসব ভিক্ষুক হজের নামে সৌদি আরবে প্রবেশ করছে। পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকা গত ২৪ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদনে জানায়, ভিক্ষুক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ না করা হলে পাকিস্তানি ওমরাহ ও হজযাত্রীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

অথচ, ১৯৫৮ সালের ভেগ্রেন্সি অর্ডিন্যান্স (ভবুঘুরে ও ভিক্ষুকদের নিয়ে যে আইন) অনুযায়ী, পাকিস্তানে ভিক্ষাবৃত্তি বেআইনি। এই আইনের অধীনে ভিক্ষুক বা ভিক্ষা করা শিশুদের অভিভাবকদের তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে দেশটির কেউই এই আইনকে তোয়াক্কা করছে না।

তবে ইতোমধ্যে পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয় ‘ওমরাহ আইন’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মাধ্যমে ওমরাহ যাত্রার ক্ষেত্রে ভ্রমণ সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। তাদের আইনি পর্যবেক্ষণের অধীনে আনা হবে। এছাড়া মন্ত্রণালয় পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ করেছে, যেন ভিক্ষুকদের হজের আড়ালে সৌদি আরবে যাওয়া বন্ধের উপায় খুঁজে বের করা হয়।

পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা এখন বৈশ্বিক পর্যায়ে চলে গেছেন। এতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে। এতে জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে মূলধারার আলোচনায় বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তখন প্রধানত নিপীড়িত শিশুদের জন্য নির্ধারিত হৃদয়বিদারক পেশা সংকট হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Link copied!