• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মরদেহ কবর না দিয়ে চিল-শকুনে খাওয়ায় যে সম্প্রদায়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
মরদেহ কবর না দিয়ে চিল-শকুনে খাওয়ায় যে সম্প্রদায়
ছবি : সংগৃহীত

ভারত, পাকিস্তান ও ইরানে শকুন কমে যাওয়ায় মরদেহ সৎকার করা কঠিন হয়ে পড়ছে পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষের। পার্সিয়ানরা জরথ্রুস্ট ধর্মে বিশ্বাসী। আর রীতি অনুযায়ী মরদেহ সৎকারের ভিন্ন এক পদ্ধতি অনুসরণ করেন এই ধর্মাবলম্বীরা।

পার্সিদের ধর্মীয় রীতি অনুসারে, তাদের কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু হলে তারা মরদেহ সৎকার করেন না। মৃতদেহ কবর দেওয়া বা পুড়িয়ে ফেলার সংস্কারেও তারা বিশ্বাসী নন। বরং মৃতদেহকে খোলা আকাশের নিচে রেখে যাওয়াই পার্সিদের রীতি। চিল-শকুনে যাতে মৃতদেহ ছিঁড়ে খেতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে কোনো খালি নিরিবিলি জায়গায় রেখে আসা হয় সেটি।

পার্সিরা যে স্থানটিতে মৃতদেহ রেখে আসে, সেই সৎকার স্থানটিকে বলা হয় ‘টাওয়ার অব সাইলেন্স’। টাওয়ার অব সাইলেন্স জায়গাটি একটি ছাদবিহীন সুউচ্চ কাঠামো, নিচে একটি দরজা রয়েছে এবং ভেতরে রয়েছে কয়েকটি তাক। শুধু নির্দিষ্ট কিছু ধর্মীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এবং নানা রীতিনীতির মাধ্যমে পার্সি পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনের মৃতদেহকে ওই সব তাকে রেখে আসেন। 

খোলা ছাদ দিয়ে চিল, শকুন ইত্যাদি পাখি ভেতরে প্রবেশ করে মৃতদেহ খেতে আরম্ভ করে। আর এ প্রথার মাধ্যমে মৃতদেহ পৃথিবীকে উৎসর্গ করে সেখান থেকে ফিরে যান মৃতের পরিবারের লোকজন। 

তবে সাম্প্রতিক সময়ে শকুনের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় মরদেহ সৎকার করতে পারছেন না পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষ। “আমরা আমাদের ঐতিহ্য আর পূরণ করতে পারছি না”, বলছিলেন করাচির বাসিন্দা হোশাং কাপাডিয়া। আশি পেরোনো এই বৃদ্ধ বলেন, “আমরা আমাদের জীবনধারা, আমাদের সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছি।” তিনি বলেন, পার্সি সমাধি প্রথার পেছনের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবী থেকে ‘কম নেওয়া এবং বেশি দেওয়া’। 

সিন্ধু নদীর বদ্বীপে অবস্থিত করাচি শহর। ২ কোটি মানুষের এই শহরে পার্সি সম্প্রদায়ের ৮০০ মানুষ বসবাস করেন। শহরটিতে মাত্র দুটি সমাধি টাওয়ার অবশিষ্ট রয়েছে, তবে দুটি টাওয়ারেই সৎকার কার্যক্রম কোনোরকমে টিকে আছে। 

ভারতীয় উপমহাদেশে শকুনের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। ২০০৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই অঞ্চলের ৯৭ শতাংশ শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে গবাদিপশুর বিষক্রিয়ায়। এ অঞ্চলে গবাদিপশুগুলোকে প্রদাহবিরোধী ডাইক্লোফেনাক খাওয়ানো হয়। এসব পশু মারা গেলে এবং মরদেহ শকুনে খেলে তাদের বিষক্রিয়া হয়।

Link copied!