সিরিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রভাবশালী দেশ। দেশটির কথা সামনে এলে, একটি পরিবারের কথা সামনে আসবেই। আর তা হলো, ‘আল-আসাদ পরিবার’। এর পেছনে যথেষ্ট কারণ ও সমীকরণও আছে। এরমধ্যে অন্যতম কারণ টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে দেশটি শাসন করেছে এই পরিবার।
এদিকে আল-আসাদ পরিবারের কথা সামনে এলে আরও দুটি নাম সবার নজর কারবে। তারা হলেন, হাফিজ আল-আসাদ ও বাশার আল-আসাদ। সম্পর্কে তারা বাপ-ছেলে। মূলত তাদের হাত ধরেই প্রায় ৫৪ বছর সিরিয়ার ক্ষমতা ধরে রেখেছিল আল-আসাদ পরিবার। দীর্ঘ এই সময়ে হাফিজ-বাশার ক্ষমতায় থাকাকালে নিজ দেশ ও দেশের বাইরে তাদের অনেক বন্ধু-শক্তুর সৃষ্টি হয়েছে। যাদের কারও সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো ছিল, কারও সঙ্গে ভালো ছিল না। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল দেশটির জনগণ। দীর্ঘদিন ধরেই এই পরিবারের শাসন থেকে বের হতে চেয়েছিলেন সিরিয়ানরা। কিন্তু আন্দোলন-সমালোচনা তোয়াক্কা না করেই ক্ষমতা ‘আঁকড়ে’ ধরে রেখেছিল। এসময়ের মধ্যে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়া-ইরানসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।
২০১১ সাল থেকে সিরিয়া চলছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। এতে একসময়ের বেশ সমৃদ্ধ দেশটি রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। প্রায় ১৩ বছর ধরে চলে লড়াই-রক্তপাত। এতে ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে সিরিয়া। তবে বিদ্রোহীদের টানা আক্রমণে দীর্ঘদিনের লড়াই-রক্তপাতের সমাপ্তি ঘটে মাত্র ১৪ দিনের ‘যুদ্ধে’। ইসরায়েলি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের আক্রমণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন দুই যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে গেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্যমতে, ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবার সিরিয়া সীমান্ত অতিক্রম করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৯৭৪ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি ট্যাংক সিরিয়ার সীমান্ত বেড়া অতিক্রম করে।
অন্যদিকে রাশিয়া আসাদকে রক্ষা করতে আর আগ্রহী না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে। রাশিয়ার সমর্থন হারিয়েই আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেন ডোনাল্ট ট্রাম্প।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি ইসলামিক সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা এই অভিযানের নেতৃত্বে আছে তাদের টেলিগ্রাম হ্যান্ডেলে বলেছে, এর মাধ্যমে একটি অন্ধকার যুগের অবসান ঘটেছে, এবং এক নতুন যুগের সূচনা ঘটেছে।
বাশার আল-আসাদের পতনের পর দামেস্কের পথে পথে ব্যাপকসংখ্যক মানুষকে উল্লাস করতে দেখা গেছে।
সিরিয়ার ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাফিজ আল-আসাদ। ২০০০ সালে তার মৃত্যু হলে ওই বছরই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তার ছেলে বাশার আল-আসাদ। ২৯ বছর মসনদে থাকা বাবা হাফিজ আল-আসাদের হাতেই উত্থান হয়েছিল বাশারের। টানা দুই যুগ (২৪ বছর) ধরে তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট পদে।
টানা দুই যুগ সিরিয়ার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পর সিরিয়ার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন কে? অথবা সিরিয়াকে নতুন করে সাজাবে কারা। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।