• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে নদীর কারণে বাড়ছে হিমালয়ের উচ্চতা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২৪, ০৫:২০ পিএম
যে নদীর কারণে বাড়ছে হিমালয়ের উচ্চতা
সূত্র: সংগৃহীত

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হলো হিমালয় পর্বতমালার মাউন্ট এভারেস্ট। যার উচ্চতা দিন দিন আরও বাড়ছে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশ্বের এই সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার পেছনের কারণ হচ্ছে একটি নদী। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা আগের চেয়ে ১৫-৫০ মিটার উঁচু হয়েছে। একটি নদীর পাথর ও মাটি ক্ষয়ের কারণেই এমনটা ঘটছে। যা উঁচু পর্বতকে আরও  ওপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) গবেষকরা জানিয়েছেন, মাউন্ট এভারেস্ট থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরের অরুণ নদীর অববাহিকায় ভূমির ক্ষয় হচ্ছে। যার ফলে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি প্রতি বছর আরও ২ মিলিমিটার করে বাড়ছে।

গবেষক অ্যাডাম স্মিথ বলেন, “এটা অনেকটা জাহাজ থেকে মালামাল ফেলে দেওয়ার মতো। জাহাজ হালকা হয়ে যায়, তাই একটু উঁচুতে ভাসতে থাকে। একইভাবে, যখন ভূত্বক হালকা হয়ে যায়... এটি একটু উঁচুতে ভেসে উঠতে পারে।”

জানা যায়, প্রায় ৪০-৫০ মিলিয়ন বছর আগে ভারতীয় ও ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে হিমালয় গঠিত হয় এবং প্লেট টেকটোনিক্স ক্রমাগত উত্থানের প্রধান কারণ হিসাবে রয়ে গেছে।

এদিকে অরুণ নদীর এমন ক্ষয় সর্বচ্চো শৃঙ্গটি উত্থানের অন্যতম কারণ বলে ইউসিএল দলটি জানিয়েছে। গবেষকরা জানান, অরুণ নদী হিমালয়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি পৃথিবীর ভূ-ত্বক থেকে উপাদান ক্ষয় করছে। এটি ভূত্বকের নিচে পরবর্তী স্তরকে জাগিয়ে তুলছে। যার ফলে পাতলা ভূ-ত্বকটি নমনীয় হয় এবং ওপরের দিকে ভাসতে থাকে।

পর্বতশৃঙ্গের ওপর নদীর এই প্রভাব আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড নামে পরিচিত। ন্যাচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত এই গবেষণায় আরও বলা হয়, এই ঊর্ধ্বমুখী ধাক্কা শক্তির কারণে এভারেস্ট এবং বিশ্বের চতুর্থ ও পঞ্চম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লোৎসে ও মাকালুসহ অন্যান্য প্রতিবেশী শৃঙ্গও ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে।

গবেষক ড. ম্যাথিউ ফক্স বলেন, “আমরা জিপিএস যন্ত্র ব্যবহার করে বছরে প্রায় দুই মিলিমিটার করে বাড়তে দেখতে পাচ্ছি। এখন আমরা আরও ভাল ধারণা পেয়েছি যে, কী কারণে এটি চালিত হচ্ছে।”

মাউন্ট এভারেস্ট চীন ও নেপালের সীমান্তে অবস্থিত এবং এর উত্তর অংশটি চীনের সীমান্তে অবস্থিত। অরুণ নদী তিব্বত থেকে নেপালে প্রবাহিত হয়। এরপর এটি  অন্য দুটি নদীর সঙ্গে মিশে কোশীতে পরিণত হয়। যা পরে উত্তর ভারতে প্রবেশ গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

অরুণ নদী উচ্চ পলি উৎপাদনশীল নদী। এটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এর শক্তি বাড়ছে। তাই এই নদী তার গতিপথে বেশি পরিমাণে পাথর এবং মাটি ক্ষয় করছে। ইউসিএল-এর গবেষকরা আরও জানান, অরুণ নদী তার আসল শক্তি অর্জন করেছিল, যখন এটি ৮৯ হাজার বছর আগে তিব্বতের অন্য একটি নদী বা জলাশয় ‍‍‘দখল‍‍’ করে নেয়। এটি ভূতাত্ত্বিক টাইমস্কেলে একটি সাম্প্রতিক ঘটনা।

এদিকে এই গবেষণার প্রধান লেখক চায়না ইউনিভার্সিটি অব জিওসায়েন্সেসের ড. শু হান বলেন,  “মাউন্ট এভারেস্টের পরিবর্তিত উচ্চতা সত্যিই পৃথিবীর পৃষ্ঠের গতিশীল প্রকৃতিকে তুলে ধরেছে। অরুণ নদীর ক্ষয় এবং পৃথিবীর ম্যান্টলের ঊর্ধ্বমুখী চাপের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ফলে মাউন্ট এভারেস্টকে আরও উঁচুতে তুলে দিচ্ছে।”

ইউসিএল-এর গবেষণায় আরও বলা হয়, তিব্বতের আরেকটি নদী বা জলপ্রণালী দখল করার পর অরুণ নদী সম্ভবত অসাধারণ পরিমাণ পাথর ও অন্যান্য উপকরণ ক্ষয় করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। যার কারণে এভারেস্টের উচ্চতা ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ জিওসায়েন্সেসের অধ্যাপক হিউ সিনক্লেয়ারও এই তথ্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ইউসিএল দল দ্বারা চিহ্নিত অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি যুক্তিসঙ্গত। এত বড় অববাহিকায় নদী ক্ষয়ের পূর্বাভাস দেওয়া চ্যালেঞ্জিং। তাছাড়া স্থানীয় ক্ষয়ের একটি বিন্দু থেকে পর্বতমালা কোন দূরত্বের ওপর দিয়ে উঠে গেছে, তা নিয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করা অত্যন্ত কঠিন।

এভারেস্টের এই ব্যতিক্রমী উচ্চতা নদীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিও উত্তেজনাপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি উপস্থাপন করে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অধ্যাপক হিউ সিনক্লেয়ার।

সূত্র : বিবিসি।

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!