আজ থেকে ঠিক একশ দিন আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় দিল্লির বিশ্বাস ছিল, হাসিনার আসাটা একেবারেই সাময়িক। ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে যাওয়ার আগে অনেকটা সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি।
সেই ধারণা থেকেই শেখ হাসিনা ও তার সঙ্গে আসা শেখ রেহানাকে রাখা হয়েছিল দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটির টার্মিনাল ভবনে। তবে কয়েক মাস পরই ভারত সরকার বুঝতে পারে চট করে অন্য কোনো দেশে পাড়ি দেওয়া শেখ হাসিনার সম্ভব নয়। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই তাকে দিল্লির কাছাকাছি কোনো সুরক্ষিত ভবনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তবে এখন অবধি ভারত সরকার শেখ হাসিনার অবস্থানগত কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি। এভাবেই অজ্ঞাত লোকেশনে শতদিন পার করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, শেখ হাসিনাকে কীভাবে, কোন ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে? কী কারণে দেওয়া হচ্ছে?
‘চরম অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা কি স্বাধীনভাবে কোনো কিছু করতে পারছেন, কতটা পারছেন? এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে বিবিসি বাংলা। তারা দিল্লিতে একাধিক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ওয়াকিবহাল মহলের সঙ্গে কথাবার্তা বলে কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়েছে। বুধবার (১৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।
মূলত, সরকারি পদমর্যাদা ও নিরাপত্তাগত ঝুঁকি বিবেচনায় ভারতের ভিভিআইপি-রা বিভিন্ন ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলান। তবে ‘অপ্রত্যাশিত অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ’ অতিথি শেখ হাসিনার জন্য ভারত বিশেষ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে।
ভারতে শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অবগত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমত, যেটুকু না হলেই নয়, সেটুকু নিরাপত্তাই পাচ্ছেন শেখ হাসিনা। সাদা পোশাকের সদস্যরাই তার চারপাশে ঘিরে রয়েছে। তার মধ্যে অতিরিক্ত কিছু অর্থাৎ ঢাকঢোল পিটিয়ে বা ঘটা করে কোনো নিরাপত্তা তাকে দেওয়া হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনার বেলায় ‘গোপনীয়তাই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা’ নীতি মেনে চলা হচ্ছে। অর্থাৎ তার অবস্থানের গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথায়, শেখ হাসিনা কোথায়, কীভাবে আছেন, তা যত গোপন রাখা সম্ভব হবে, ততই তার নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা সহজ হবে।
তৃতীয়ত, শেখ হাসিনাকে স্থানান্তর করানো কিংবা অন্যদের সঙ্গে দেখা করানোর ব্যবস্থা করার বিষয়টা এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে যাতে কোনোভাবেই প্রকাশ্যে না আসতে হয়, সেটা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লির প্রাতঃভ্রমণকারীদের স্বর্গভূমি লোদি গার্ডেনে গিয়ে শেখ হাসিনা যে মাঝেমাঝে হাঁটাহাঁটি করছেন কিংবা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায় সন্ধ্যায় কাওয়ালি শুনে আসছেন– এমন ধরনের কাল্পনিক গল্প হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন, অতিথি হিসেবে শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। যার অর্থ তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বও ভারতের কাঁধেই। যেখানে সামান্য কোনো ভুলভ্রান্তি হলে তার দায় ভারতের কাঁধেই আসবে। যেটা দিল্লির জন্য হবে অত্যন্ত বিব্রতকর।
প্রতিবদেন বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করা হচ্ছে না। তার জীবনকে সামান্যতম ঝুঁকিতেও ফেলে যাবে না। একই সঙ্গে তার অবস্থানের বিষয়টা কঠোরভাবে গোপন রাখতে হবে। এসব বিবেচনায় নিয়েই ভারতে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা প্রোটোকল সাজানো হয়েছে।