• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পাচার ঠেকাতে গণ্ডারের শিঙে ‘ভয়ঙ্কর চিপ স্থাপন’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৪, ০৬:২৬ পিএম
পাচার ঠেকাতে গণ্ডারের শিঙে ‘ভয়ঙ্কর চিপ স্থাপন’
গণ্ডারের শিঙে প্রবেশ করানো হচ্ছে ভয়ঙ্কর তেজস্ক্রিয় পদার্থ। ছবি: সিবিএস নিউজ

বিশ্বের বেশিরভাগ গণ্ডারের নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরির জন্য (যা বৈজ্ঞানিকভাবে অপ্রমাণিত) গণ্ডারের শিঙের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এশিয়ায়। তাছাড়া কালোবাজারে চড়া দামেও বিক্রি হয় শিং। একসময় ভিয়েতনামে কোকেনের চেয়েও গণ্ডারের শিং দামি হয়ে উঠেছিল। ফলে গণ্ডার পাচার নিয়ে বড় সমস্যায় পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় পাচার ঠেকাতে গণ্ডারের শিঙে ঢুকানো হলো তেজস্ক্রিয় পদার্থ বা চিপ। এতে প্রাণীটির শিং আর মানুষের ভক্ষণের উপযোগী থাকবে না। কাজটি করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা। ফলে সীমান্ত চৌকি দিয়ে পাচারের সময় গণ্ডার শনাক্ত করা সহজ হবে। খবর এএফপির।

গণ্ডারের শিঙে তেজস্ক্রিয় চিপ বসানোর প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন ইউনিভার্সিটি অভ উইটওয়াটার্সর‍্যান্ডের রেডিয়েশন অ্যান্ড হেলথ ফিজিকস ইউনিটের পরিচালক জেমস লারকিন। রাইসোটোপ নামের এই প্রকল্পে ২০টি গণ্ডার অংশ নিচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়াটারবার্গ এলাকায় লিমপোপো গণ্ডার সংরক্ষণ এলাকায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ১৫ হাজার জীবিত গণ্ডার রয়েছে বলে উঠে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশনের প্রাক্কলনে।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, তেজস্ক্রিয় চিপ গণ্ডারের শিঙে বসানো হয়েছে ইনজেকশনের মাধ্যমে। সেজন্য আগে গণ্ডারকে ঘুম পাড়িয়ে নেওয়া হয়। জেমস লারকিন বলেন, “একটি গণ্ডারের শিঙে আমরা দুটো ছোট্ট তেজস্ক্রিয় চিপ ঢুকিয়ে দিয়েছি। তেজস্ক্রিয় পদার্থটি গণ্ডারের শিংকে মানুষের জন্য বিষাক্ত করে তোলে। তবে পদার্থ খুব কম মাত্রায় ঢুকানো হচ্ছে। যাতে প্রাণীটির স্বাস্থ্য বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করছে না।”

গণ্ডারগুলোকে কার্যকরভাবে যে রক্ষা করা যাচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে জেমস লারকিনের টিম ফলো-আপ হিসেবে রক্তের নমুনা নেবে। তেজস্ক্রিয় এই পদার্থ গণ্ডারের শিঙে পাঁচ বছর টিকে থাকবে। দেড় বছর পরপর শিং কেটে ফেলার চাইতে এ প্রক্রিয়ায় খরচ অনেক কম বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।

অবশ্য শিং গজালেও পাচারকারীরা সেই শিং কাটার সময় গণ্ডারকে ঘুম না পাড়িয়েই হত্যা করে। সেই হত্যাকাণ্ড রোধ করতেই ১৮ মাস পরপর গণ্ডারের শিং কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি।

জেমস লারকিন বলেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত চৌকিতে ডিটেক্টরে ধরা পড়ার মতো পর্যাপ্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রবেশ করানো হবে গণ্ডারগুলোর শরীরে। ফলে কোনো পাচারকারী যদি তেজস্ক্রিয় চিপযুক্ত শিং পাচার করতে চায়, তাহলে সেটি শনাক্ত করা যাবে।

সীমান্ত এজেন্টরা প্রায়ই রেডিয়েশন ডিটেক্টর দিয়ে অবৈধভাবে আমদানি করা পণ্য ধরে ফেলেন। এছাড়া বন্দর ও বিমানবন্দরে স্থাপন করা হাজার হাজার রেডিয়েশন ডিটেক্টর আছে যেগুলো এসব চিপ শনাক্ত করতে পারবে। মূলত, পাচারকারীদের কাছে দাম কমিয়ে দেওয়ার জন্যই গণ্ডারের শিং কেটে ফেলা হয়। সংরক্ষণবিদ আরি ভ্যান ডিভেন্টার বলছেন, গণ্ডারের শিং পাচার ঠেকানোর জন্য তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রবেশ করানো ‘সেরা বুদ্ধি’।

গেল ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলেছিল, অবৈধ বাণিজ্য ঠেকাতে সরকারের আপ্রাণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ২০২৩ সালে ৪৯৯টি গণ্ডার হত্যা করা হয়েছে। যে হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই রাষ্ট্রচালিত পার্কে। এ সংখ্যা ২০২২ সালের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।

লিমপোপো গণ্ডার সংরক্ষণ এলাকার প্রতিষ্ঠাতা আরি ভ্যান ডিভেন্টার বলেন, “গণ্ডারের শিং কেটে ও শিঙে বিষ মিশিয়ে পাচারকারীদের ঠেকানো সম্ভব হয়নি। তবে তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রবেশ করানোর এ উদ্যোগ সফল হতে পারে।”

Link copied!