মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। এই দুর্ঘটনায় আরও নিহত হন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানসহ মোট ৯ জন। সোমবার (২০ মে) সকালি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করে ইনারে গণমাধ্যম। এর আগে রোববার রাইসিকে নিয়ে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
বিবিসি, আল-জাজিরাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গতকাল আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের একটি বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসি–আব্দোল্লাহিয়ানসহ তাদের সঙ্গে থাকা অন্য কর্মকর্তারা।
পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। অবশ্য অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনা জানায়, পূর্ব আজারবাইজানের ভারজাঘান শহরের পাশে দিজমার এলাকায় এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ঘটে। শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে অভিযান ব্যাহত হওয়ার খবর জানানো হয়।
এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, রাইসি ও আব্দোল্লাহিয়ানকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এটি বেল-২১২ মডেলের। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানের কাছে এমন কোনো হেলিকপ্টার বিক্রি করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
আরও জানা গেছে, বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারটি থেকে অন্তত একজন আরোহী ও একজন ক্রু উদ্ধারকারীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পর রাশিয়া ও তুরস্কের উদ্ধারকারী দলও অভিযানে যুক্ত হয়। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু নিউজ এক এক্স বার্তায় জানায়, ইরানের পাহাড়ি এলাকায় তুরস্কের একটি উদ্ধারকারী ড্রোন তাপের উৎসের সন্ধান পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ইরানের বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষের। সেখানে উদ্ধার তৎপরতায় জড়িত ব্যক্তিদের এ তথ্য জানানো হয়েছে। উদ্ধারকারীদের ৭৩টি দল তল্লাশিতে অংশ নেয়। সঙ্গে নেওয়া হয় কুকুর ও ড্রোন।
এর মধ্যে ইরানি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট পীর হোসেন কোলিভান্দ বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি খুঁজে পাওয়ার ঘোষণা দেন। ইরানের একজন কর্মকর্তার বরতা দিয়ে রয়টার্স জানায়, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে।
এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে নিয়ে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারে ‘প্রাণের চিহ্ন নেই’।
এর পরপরই ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজের খবরে বলা হয়, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশটির জনগণের জন্য তাঁর দায়িত্বপালন করার সময় একটি দুর্ঘটনার শিকার হন। তিনি শহীদ হয়েছেন। সেই সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানসহ বাকিরাও নিহত হয়েছেন।