পূর্ব অঞ্চলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় শান্ত সমুদ্রের পানির গড়পড়তা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া তথা প্রাকৃতিক ‘এল নিনো’ ঘটনার কারণে উষ্ণ হয়ে পড়েছে প্রশান্ত মহাসাগর। টানা ১৩ মাস ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে বৈশ্বিক তাপমাত্রাও বেড়েছে। মূলত, চলতি বছরে ‘এল নিনো’র প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ তাপপ্রবাহ দেখা গেছে। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। একইসঙ্গে প্রচণ্ড খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে বিশ্বের অনেক অঞ্চল।
বৈশ্বিক জলবায়ু পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রাকৃতিক লা নিনা বা শীতল পর্যায়ে আরেকটি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটবে। যাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমে যাবে। এতে তাপপ্রবাহের বিপরীত ঘটনা হিমপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে তাতে ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহের বিপরীত পরিস্থিতিও আছে। যেখানে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি থেকে অবনমন ঘটে। তীব্র তাপমাত্রার নিম্নগতি মাইনাস ৬০-৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
এদিকে, বুধবার (৮ মে) বৈশ্বিক তাপপ্রবাহ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস তাদের এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা রেকর্ডের ইতিহাসে এবার সবচেয়ে উষ্ণতম এপ্রিল দেখল বিশ্ব। একই সঙ্গে তাপমাত্রা রেকর্ড তালিকায় চলতি বছরের প্রতিটি মাস আগের বছরগুলোর একই মাসের তুলনায় গ্রহের সবচেয়ে উষ্ণতম হিসেবে রেকর্ড গড়েছে।
কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের প্রতিবেদনের সেই তথ্য প্রকাশ করেছে এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক আবহাওয়ার বিশেষ অবস্থা এল নিনো দুর্বল হয়ে পড়ার পরও গত এপ্রিলজুড়ে অস্বাভাবিক গরম অনুভব করেছেন বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ।
কোপারনিকাসের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত বছরের জুনের পর থেকে প্রতিটি মাসই আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় উষ্ণ ছিল। এ বছরের এপ্রিলও তার ব্যতিক্রম ছিল না। মূলত, মানবসৃষ্ট কারণেই বিশ্বের জলবায়ু এতটা উষ্ণ হয়ে পড়েছে বলে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
কোপারনিকাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৮৫০-১৯০০ সালের প্রাক্-শিল্প সময় থেকে রেকর্ড করা গড় তাপমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি দেখা গেছে। গত এক বছরে গড় তাপমাত্রা প্রাক্-শিল্প যুগের চেয়ে ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। যদিও ২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এই তাপমাত্রা যেন কোনোভাবেই ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির বেশি না বাড়ে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভারত থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম পর্যন্ত এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েক সপ্তাহজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। অন্যদিকে আবার ব্রাজিলে ব্যাপক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কোপারনিকাসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউরোপের বেশির ভাগ অংশে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি দেখা গেছে। যদিও দক্ষিণ স্পেন, ইতালি এবং পশ্চিম বলকান দেশগুলো গড়ের চেয়ে বেশি শুষ্ক ছিল।
একইভাবে ভারী বৃষ্টিতে উত্তর আমেরিকা, মধ্য এশিয়া ও পারস্য উপসাগর এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার যেখানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে, সেখানে দেশটির অন্য অঞ্চলে আবার প্রচণ্ড খরা দেখা দিয়েছে। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে উত্তর মেক্সিকো ও কাসপিয়ান সাগর এলাকায়।
কোপারনিকাসের জলবায়ুবিশেষজ্ঞ জুলিয়েন নিকোলাস বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে চরম আবহাওয়ার পরিস্থিতি দেখা যায়। এসব পরিস্থিতি আরও তীব্র ও ঘন ঘন ঘটতে থাকে। তাই এপ্রিলে চরম খরা ও বন্যার মতো পরিস্থিতি দেখা গেছে।”